রাজনীতি

মনে হচ্ছে আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জামায়াতকে ক্ষমতায় দেবেন: শাহজাহান

Advertisement

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী মন্তব্য করেছেন যে, “আমার মনে হয়, আল্লাহতালা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতা দেবেন।” তিনি আরও বলেন, জামায়াতের জন্য বর্তমানে যে সুযোগ এসেছে, ভবিষ্যতে আর এমন সুযোগ আসবে না। তবে তার এই বক্তব্যের চেয়েও বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের নিয়ে তার দেওয়া বক্তব্যে।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের নির্বাচনি দায়িত্বশীলদের সমাবেশে শাহজাহান চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন শুধু জনগণের ওপর নির্ভর করে না, বরং প্রশাসনের সহযোগিতা অপরিহার্য।

প্রশাসনকে ‘আন্ডারে’ আনার বিতর্কিত ঘোষণা

শাহজাহান চৌধুরী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে, জামায়াত ক্ষমতায় এলে বা নির্বাচনি কাজে সুবিধা পেতে প্রশাসনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। তাঁর এই বক্তব্য বাংলাদেশের বেসামরিক ও আইনশৃঙ্খলা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

  • নিয়ন্ত্রণের দাবি: তিনি বলেন, “আমি ন্যাশনালি বলব না, যার যার নির্বাচনি এলাকায়- যারা প্রশাসনে আছেন, তাদেরকে অবশ্যই আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে।”
  • নির্দেশনা মানতে হবে: তার দাবি, প্রশাসনকে জামায়াতের কথায় উঠতে-বসতে হবে, জামায়াতের কথায় গ্রেপ্তার করতে হবে এবং মামলা করতে হবে
  • প্রটোকল ও সহযোগিতা: তিনি আরও বলেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, যেমন ওসি সাহেব এবং টিএনও (ইউএনও) সাহেব, যেন জামায়াতের নমিনিকে প্রটোকল দেন এবং উন্নয়নের হিসাব দেন।

শাহজাহান চৌধুরীর এই মন্তব্যটি প্রশাসনের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে এবং এর ফলে জনমনে আইনি প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

নির্বাচনে বিদেশি অর্থ ও অস্ত্রের আশঙ্কা

শাহজাহান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি প্রভাব এবং অর্থের লেনদেন নিয়েও সতর্ক করেছেন।

তিনি বলেন, “দুর্নীতির টাকা বাদ দেন, পার্শ্ববর্তী দেশ হিন্দুস্তান থেকে বস্তা বস্তা টাকা দেশে ঢুকবে। আর অস্ত্র ঢুকবে।” তিনি এই বিষয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে আহ্বান জানান। এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং এটি নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

নির্বাচনে বিজয়ের জন্য জনগণের গুরুত্ব

যদিও শাহজাহান চৌধুরী প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে আনার কথা বলেছেন, তবুও তিনি স্বীকার করেন যে, জনগণের সমর্থন ছাড়া বিজয় সম্ভব নয়। তিনি সংগঠন ও জনগণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ওপর জোর দেন।

  • সংগঠন বনাম নির্বাচন: তিনি বলেন, “আমাকে মাফ করবেন, নির্বাচন সংগঠন নয়। সংগঠন অবশ্যই লাগবে। সংগঠন আমাদের মৌলিক ভিত্তি। সংগঠনই আমাদের একমাত্র ধারক এবং বাহক।”
  • জনগণকে বিচ্ছিন্ন করা: তিনি সতর্ক করে দেন যে, জনগণকে যদি জায়গা দিতে না পারা যায়, তাহলে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া কঠিন। এ প্রসঙ্গে তিনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের উদাহরণ টেনে বলেন, তারা শুধু একটি দলের লোক নিয়ে দেশ শাসন করতে চেয়েছিল, ফলে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জন-আন্দোলনে ক্ষমতা থেকে সরতে বাধ্য হয়েছে।
  • সকলের অংশগ্রহণ: তিনি নির্বাচনীয় দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানান যে, সম্মেলনে ডেকোরেশনের বয়দের মতো সমাজের সকল স্তরের ভোটারদের নিয়ে সমাবেশ করতে হবে, কারণ সবাইকে নিয়েই নির্বাচন।

ভোটারদের কাছে ‘দাঁড়িপাল্লা’র বার্তা

শাহজাহান চৌধুরী সমাবেশে উপস্থিত দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন যে, যার যার নির্বাচনি এলাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মাধ্যমে জামায়াতের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লার’ কথা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

তিনি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষককে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে বলেন এবং প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারদেরও এই প্রচারণায় যুক্ত করতে বলেন। এটি মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং নির্বাচনি প্রচারণায় শিক্ষাবিদদের ব্যবহারের প্রবণতাকে নির্দেশ করে।

আর্থিক সহযোগিতা ও প্রভাবের দাবি

শাহজাহান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে অতীতে তাঁর ব্যক্তিগত প্রভাব ব্যবহার করে দক্ষিণ জেলায় আর্থিক সহযোগিতা এনে দেওয়ার বিষয়েও দাবি করেন। তিনি উপদেষ্টাদের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে লোহাগাড়ায় ১০০ কোটি এবং সাতকানিয়ায় ১০০ কোটি টাকা সহযোগিতা করার কথা বলেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য লোহাগাড়ায় ১০ কোটি ও সাতকানিয়ায় ১০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান।

তাঁর এই দাবি, নির্বাচিত হওয়ার আগেই প্রশাসনিক ও আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকার উন্নয়ন কাজে যুক্ত থাকার একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়, যা অনেক সময় নির্বাচনি আচরণবিধির বাইরে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দিতে পারে।

“প্রশাসনকে অবশ্যই… যার যার নির্বাচনি এলাকায়… আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে-বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।”

রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক

জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীর এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ‘আল্লাহর সিদ্ধান্ত’ এবং ‘প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে আনা’—এই দুটি বক্তব্য একদিকে যেমন দলের কর্মীদের মধ্যে একটি আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে, অন্যদিকে তেমনি তা দেশের সাধারণ জনগণ, প্রশাসন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়ার এই প্রচেষ্টা গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই ধরনের বক্তব্য আগামী নির্বাচনের পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং এর ফলে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চাপ আরও বাড়বে।

এম আর এম – ২৩৩৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button