যুক্তরাজ্যে রুশ রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার: কূটনৈতিক উত্তেজনা অব্যাহত

যুক্তরাজ্য বৃহস্পতিবার রাশিয়ার একজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। গত বছর মস্কো এক ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার পর এটি কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের নতুন একটি অধ্যায় হিসেবে উঠে এসেছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কেলিন, যিনি ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে মস্কোর রাষ্ট্রদূতের পদে রয়েছেন, তাকে এই সিদ্ধান্তের পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরে ডেকে নেয়া হয়।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: কূটনৈতিক উত্তেজনার বৃদ্ধি
যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়ার ‘অপ্রীতিকর ও ভিত্তিহীন সিদ্ধান্তের’ প্রতিক্রিয়া হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত নভেম্বরে মস্কো এক ব্রিটিশ কূটনীতিককে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বহিষ্কার করেছিল। যুক্তরাজ্য এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে রুশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
যুক্তরাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র জানান, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই ধরনের হুমকি সহ্য করা হবে না এবং যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
কেলিনের বহিষ্কার: কূটনৈতিক পদক্ষেপের আওতায়
আন্দ্রে কেলিন ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে মস্কোর রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। গত বছর মস্কো যখন একটি ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে, তখন থেকেই যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও খারাপ হতে শুরু করে।
যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছে, “রাশিয়া যদি অতিরিক্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে যুক্তরাজ্য তার উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে।” ক্রেমলিন এখনো প্রকাশ্যে এই বহিষ্কার সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রাশিয়া পূর্বেই জানিয়েছিল, যে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হলে তারা আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকবে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের পদক্ষেপ
গত বছর নভেম্বরে মস্কো এক ব্রিটিশ কূটনীতিককে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বহিষ্কার করে। রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা, এফএসবি, ওই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে তার নথিতে ভুয়া তথ্য সরবরাহ এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ তোলে। রুশ সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কূটনীতিককে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ওই অভিযোগগুলো মিথ্যা বলে অস্বীকার করে এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানোর ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, “রাশিয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটি অবমাননাকর পদক্ষেপ।”
রাশিয়ার সাথে যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক: অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। এ সময়ে যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র সরবরাহ এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানানো অন্তর্ভুক্ত।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া ঘোষণা করেছিল, মস্কোতে ছয় ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তাদের দেশ ত্যাগের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপের পর যুক্তরাজ্য আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায় এবং রাশিয়াকে সতর্ক করে যে, তাদের ভুল পদক্ষেপের কারণে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
কূটনৈতিক উত্তেজনার সঙ্কট: পরবর্তী পদক্ষেপ
বর্তমান কূটনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে, এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি এখনো দূরবর্তী। যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কোনো ধরনের উত্তেজনা সহ্য করবে না এবং প্রতিটি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকবে। রাশিয়া যদি অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে যুক্তরাজ্য সেগুলোর প্রতিক্রিয়া জানাবে, কিন্তু এটি স্পষ্ট যে কোনো রকম সংঘর্ষ বা নতুন কূটনৈতিক যুদ্ধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন হবে।
বিশ্ব রাজনীতির প্রভাব: যুক্তরাজ্য-রাশিয়া সম্পর্ক
বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষিতে, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, তখন তার প্রভাব শুধু ঐ দেশগুলোর উপরই নয়, বরং গোটা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পড়ে। রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের ফলে অন্যান্য দেশগুলোও তাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে।
এ পরিস্থিতিতে, বিশ্ব রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য প্রয়োজন হবে কূটনৈতিক সংলাপ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে আগানো। তবে যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়ার মধ্যে একে অপরের প্রতি সন্দেহ এবং বিরোধ বৃদ্ধির সঙ্গে, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় পরিণত হতে পারে।
নির্বাহী সিদ্ধান্ত: ভবিষ্যতের প্রভাব
যদিও এই বহিষ্কার সত্ত্বেও কোনো সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা বর্তমানে নেই, তবে যুক্তরাজ্য ও রাশিয়ার মধ্যে ভবিষ্যতে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে যদি মস্কো এবং লন্ডন আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানায়, তাহলে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। একই সঙ্গে, ইউরোপে রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রভাবের ওপরও নতুন জিজ্ঞাসা সৃষ্টি হতে পারে।