রাজনীতি

জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে ভোটাররা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বেন: গোলাম পরওয়ার

Advertisement

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার মন্তব্য করেছেন, একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট আয়োজন করা হলে ভোটাররা বিভ্রান্তি এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন। তিনি মনে করেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংবিধান বা অন্যান্য সংশোধনের বিষয়টি আগে গণভোটে আসা উচিত। তাঁর মতে, সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেভাবে একসঙ্গে নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা গণতন্ত্রের জন্য অনুকূল নয়।

শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে খুলনার আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের আটরা শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নারী ভোটার সমাবেশে বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে এবং প্রধান উপদেষ্টাকে মিসগাইড করা হচ্ছে।

একইদিনে নির্বাচন-গণভোট: বিভ্রান্তির আশঙ্কা

জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল তাঁর তীব্র আপত্তি জানান। তাঁর মতে, একসঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ভোট অনুষ্ঠিত হলে তা ভোটারদের মনোনিবেশ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলবে।

বিভ্রান্তির কারণ: মিয়া গোলাম পরওয়ার মনে করেন, ভোটারদের একইদিনে জাতীয় সংসদের জন্য প্রার্থী বাছাই এবং একটি জটিল সাংবিধানিক বা নীতিগত বিষয়ে মতামত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা কঠিন। এতে ভোটাররা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক চাপের মধ্যে পড়বেন।

গণভোটের অগ্রাধিকার: তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি কোনো বড় ধরনের সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে সেই সংশোধনের বিষয়টি আগে গণভোটে আসা উচিত। এটি সম্পন্ন হওয়ার পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না।

এই মন্তব্যের মাধ্যমে মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রকারান্তরে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

নির্বাচন কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জিং বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

আইন প্রণয়নের অপেক্ষা: ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকার চিঠি দিয়ে একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করতে বলেছে। তবে তিনি বলেন, গণভোটের আইনটি এখনো হয়নি, আইনটি হওয়ার পর কমিশন বাকি কাজগুলো করতে পারবে।

সিইসি’র মন্তব্য: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এই পরিস্থিতিকে অভূতপূর্ব বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট করার মতো এমন মুখোমুখি পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি পূর্ববর্তী কোনো নির্বাচন কমিশনকে।” এই মন্তব্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর থাকা চাপ ও চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়।

আইনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া: সিইসি আরও বলেন যে, “আইন মেনেই সব প্রক্রিয়া হচ্ছে।” তবে গণভোটের প্রস্তুতি নিতে কমিশন আগামী সপ্তাহে আইন হওয়ার পর কাজ শুরু করবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড

মিয়া গোলাম পরওয়ার তাঁর বক্তব্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা এবং নির্বাচনকে ঘিরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অনুপস্থিতির বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, নির্বাচন এখনো শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। তাঁর অভিযোগ, দেশের প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নির্দেশনা মানছে। এই পরিস্থিতি জামায়াতের মতো বিরোধী দলগুলোর জন্য প্রচারণা ও জনসভা আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছে বলে তিনি মনে করেন।

জামায়াতের ৫ দফা দাবি ও আন্দোলন

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে জামায়াতে ইসলামী তাদের ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

দাবি আদায়ের কৌশল: মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতে বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করা হবে।

সরকারের প্রতি বার্তা: তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন যে, সরকারের ভেতরে থাকা কিছু মহল প্রধান উপদেষ্টাকে মিসগাইড করছে।

তরুণ ভোটার ও আগামীর সরকার

সন্ধ্যায় ফুলতলা সদর ইউনিয়নের ঢাকুরিয়া সরকারি স্কুল মাঠে আয়োজিত অপর এক ভোটার সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার তরুণ ভোটারদের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

তরুণদের ভূমিকা: তিনি বলেন, প্রায় ১৩ কোটি ভোটারের মধ্যে সাড়ে ৪ কোটিই তরুণ ভোটার। আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে তরুণরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। সুতরাং, যারা তরুণদের চাওয়া বুঝতে ব্যর্থ হবে, তারা রাজনীতি থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হবে।

‘জেনজি’র আকাঙ্ক্ষা: জামায়াত এই ‘জেনজির’ (Gen Z) আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে চায়। তিনি একটি ন্যায় ও ইনসাফের কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার করেন, যেখানে শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের চাহিদা পূরণ হবে।

দুর্নীতিমুক্ত দেশ: তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রে চাঁদার জন্য আর কাউকে জীবন দিতে হবে না, বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে না। তিনি আগামী নির্বাচনে দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিয়ে কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গড়তে সাহায্য করার আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন জরুরি

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের ‘একইদিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হবেন’—এই মন্তব্য দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার গভীরতা তুলে ধরে। নির্বাচন কমিশনের ওপর একইসঙ্গে দুটি বড় দায়িত্ব পালনের যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা কমিশনের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, জামায়াতের মতো বিরোধী দলের পক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাবের অভিযোগ, রাজনৈতিক সংকটের দ্রুত নিরসন এবং তরুণ প্রজন্মের চাওয়া পূরণের দাবি সরকারের প্রতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বার্তা দিচ্ছে। নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে এবং ভোটারদের বিভ্রান্তি এড়াতে সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি।

এম আর এম – ২৩৩৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button