সাতক্ষীরায় জামায়াত প্রার্থীর শোডাউনের বাইকের ধাক্কায় বৃদ্ধের মৃত্যু, এলাকায় উত্তেজনা
সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থীর মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার সময় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। শোডাউনের একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ফজর আলী (৭৩) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বাদামতলা বাজারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ফজর আলী একই এলাকার কারিগর পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। শোডাউনের মতো জনসমাগমের কারণে সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত ও নিহতের পরিচয়
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বাদামতলা বাজারে যখন দুর্ঘটনাটি ঘটে, তখন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর সমর্থনে শত শত মোটরসাইকেলের একটি দীর্ঘ শোভাযাত্রা ওই এলাকা অতিক্রম করছিল।
নিহত ফজর আলী বাদামতলা এলাকার কারিগর পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি নামাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। নিহতের ভাতিজা শামসুজ্জামান জানান, তাঁর চাচা বয়স্ক মানুষ এবং অসুস্থ ছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় শোডাউনের একটি মোটরসাইকেল তাঁকে ধাক্কা দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইকবল হোসেন জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় ফজর আলীকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে রাত ৮টায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের বক্তব্য
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জামায়াতের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান নিহত ফজর আলীর পরিচয় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ফজর আলী তাঁদের সংগঠনের মানুষ ছিলেন। তবে তাঁর দাবি, সড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুত গতির মোটরসাইকেলের ধাক্কা নয়, বরং সড়কের পাশে থাকা বাইকের লুকিং গ্লাসে ধাক্কা লাগার পর তিনি মারা যান। তিনি আরও জানান, নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য এবং জামায়াত নেতার বক্তব্যের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে সামান্য অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শোডাউনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আকার
যে শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি ছিল সাতক্ষীরা-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক-এর নেতৃত্বে পরিচালিত।
- শোভাযাত্রার বিস্তৃতি: শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় সাতক্ষীরা পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন বাইপাস গোলচত্বর থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। এটি বাইপাস সড়ক হয়ে সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
- জনসমাগম: শোভাযাত্রায় শত শত মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি ছিল। জাতীয় পতাকা, ব্যানার ও দলীয় পতাকায় সাজানো এই শোভাযাত্রা দেখতে সড়কের দুই পাশে বহু মানুষ দাঁড়িয়ে অংশগ্রহণকারীদের অভিবাদন জানাচ্ছিল। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা এতে অংশ নেন।
- দলের উৎসাহ: শোডাউনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখা যায়। সদর জামায়াতের সেক্রেটারি হাবিবুর রহমান বলেন, এই শোডাউন প্রমাণ করেছে যে সাতক্ষীরার মানুষ মুহাদ্দিস আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
প্রার্থীর বার্তা: নৈতিকতা ও উন্নত সাতক্ষীরা
শোভাযাত্রা শেষে সমাবেশে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু ছিল নৈতিকতা ও উন্নত শহর গড়ে তোলা।
মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, তাঁদের লক্ষ্য—সাতক্ষীরাকে নৈতিক ও উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি জনগণের ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাঁর বিশ্বাস, সৎ মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশ সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। তরুণদের পরিবর্তনের প্রধান বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি সাতক্ষীরাবাসীকে সত্যিকারের জনগণের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।
আইনি প্রক্রিয়া ও পুলিশের অবস্থান
দুর্ঘটনার পর আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান জানান, মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে বৃদ্ধ ফজর আলীর মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও জানান, নিহত ফজর আলীর পরিবারের কারো কোনো অভিযোগ না থাকায় পুলিশ সুরতহাল করার পর মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকায় তাৎক্ষণিক কোনো মামলা হয়নি, তবে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
নির্বাচনী উন্মাদনা ও সড়কের নিরাপত্তা
সাতক্ষীরায় জামায়াত প্রার্থীর মোটরসাইকেল শোডাউনের সময় বৃদ্ধ ফজর আলীর এই মর্মান্তিক মৃত্যু নির্বাচনী প্রচারণার উন্মাদনা ও সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি করেছে। জনসভা বা শোডাউনের মতো বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলাকালীন সড়কে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার, সেই প্রশ্নটি এখন সামনে এসেছে। যদিও নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, তবে রাজনৈতিক শোডাউনের মতো পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল আচরণ ও ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই দুর্ঘটনাটি রাজনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় সড়কে শৃঙ্খলা ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এম আর এম – ২৩৩৫,Signalbd.com


