আঞ্চলিক

উত্তাল শাহবাগ , মুখোমুখি পুলিশ ও আন্দোলনকারী

Advertisement

৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে রাজধানী ঢাকা এবং রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঢাকায় শাহবাগ মোড়ে আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়। একইসঙ্গে, রাজশাহীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।

পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অযৌক্তিক স্বল্প সময় দেওয়ার প্রতিবাদে ১৯ নভেম্বর ঢাকায় অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। আজ শনিবার (২২ নভেম্বর) আন্দোলনকারীরা যখন পথে নামেন, তখন শাহবাগে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

শাহবাগে মুখোমুখি অবস্থান ও অনশনের ঘোষণা

গত ১৯ নভেম্বর ঢাকার শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৪৭তম বিসিএস প্রিলি উত্তীর্ণদের একাংশ লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। তাদের মূল দাবি হলো, লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় কোনোভাবেই যৌক্তিক নয় এবং এটি পরিবর্তন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন ও মার্চ: বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনের পর আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে মার্চ শুরু করেন।

শাহবাগে পুলিশের বাধা: শাহবাগ মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়। এসময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মুখোমুখি অবস্থান বিরাজ করে।

অনশন শুরু: পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে নিলে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত যান এবং শহীদ মিনারে ফিরে এসে সন্ধ্যা সাতটা থেকে অনশন শুরু করেন।

আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এই অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে সম্মিলিতভাবে লিখিত পরীক্ষা বর্জন করবেন।

রাজশাহীতে রেললাইন অবরোধ: অচলাবস্থা

রাজধানীর বাইরে আন্দোলনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে রাজশাহীতে। ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করেছেন।

অবরোধের সময়: শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেল পৌনে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্টেশন বাজার রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

ট্রেন চলাচল বন্ধ: এই অবরোধের ফলে রাজশাহীর সঙ্গে সারা বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, রাজশাহী থেকে ঢাকা অভিমুখী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী স্টেশনেই আটকে আছে। এছাড়া আরও কয়েকটি স্টেশনে অন্যান্য ট্রেন আটকে আছে।

প্রতিবাদের ধরন: বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা অ্যাডমিট কার্ড পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তারা রেললাইনে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ আরও জোরদার করেন।

শিক্ষার্থীরা ‘২৪ এর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘সবাই পায় ছয় মাস, আমরা কেন দুই মাস’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

আন্দোলনকারীদের মূল দাবি: ‘বৈষম্য’ কেন?

আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীদের মূল ক্ষোভ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)-এর বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত সময় কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয় এবং এটি এক ধরণের বৈষম্য

সময় নিয়ে অসঙ্গতি: তাদের দাবি, পূর্ববর্তী বিসিএসগুলোতে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ৬ মাস সময় দেওয়া হলেও এবার মাত্র চল্লিশ থেকে ষাট দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। ১১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার জন্য দেড় বা দুই মাস সময়কে তারা অযৌক্তিক বলে মনে করেন।

পিএসসি’র রোডম্যাপ লঙ্ঘন: আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, পিএসসি নিজেরাই তাদের ঘোষিত রোডম্যাপ লঙ্ঘন করেছে। লিখিত পরীক্ষার দুই মাস আগে রুটিন প্রকাশ করার কথা থাকলেও তাদের সময় মাত্র একমাস আগেই তা করা হয়েছে।

মানসিক চাপ: প্রথমবার যারা লিখিত পরীক্ষায় বসবেন, তাদের জন্য এত কম সময় অসম্ভব রকমের মানসিক চাপের সৃষ্টি করবে এবং এটি মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতা ব্যাহত করবে বলে তারা মনে করেন।

ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ মানুষের সমর্থন

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের এই দাবি রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছে। ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, এনসিপি, ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের এই ‘যৌক্তিক দাবিকে’ সমর্থন জানিয়েছে।

ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের রাবি শাখার সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, তারা দীর্ঘ একমাস ধরে দাবি জানালেও পিএসসি তাদের একরোখা মনোভাব পোষণ করে আছে। অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, যারা ক্যাডার পর্যন্ত হয়ে গেছেন, তারাও এই যৌক্তিক আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু পিএসসির টনক নড়েনি।

যৌক্তিক সময়ের দাবি ও পিএসসির করণীয়

৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর দাবিতে ঢাকাস্থ অনশন কর্মসূচি এবং রাজশাহীর রেললাইন অবরোধ পরিস্থিতিকে এক নতুন সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি হলো, অন্যান্য বিসিএস পরীক্ষার মতো তারাও যেন লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত ও যৌক্তিক সময় পান। এই দাবি যদি দ্রুত সমাধান না করা হয়, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। অ্যাডমিট কার্ড পুড়িয়ে দেওয়া এবং রেললাইন অবরোধের মতো ঘটনা প্রমাণ করে যে, পরীক্ষার্থীরা এখন চরম হতাশাগ্রস্ত। পিএসসি-কে দ্রুত এই বিষয়ে নজর দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং তাদের দাবিগুলো বিবেচনা করে একটি যৌক্তিক সমাধানের পথে আসা উচিত, যাতে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে না পড়ে।

এম আর এম – ২৩৩৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button