আঞ্চলিক

‘কারো খোঁচার জবাব দেওয়ার সময় আমাদের নেই’: জামায়াত আমির

Advertisement

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতি যখন উত্তপ্ত, তখন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তাঁর দলের অন্য কারও ‘খোঁচা’ বা আক্রমণের জবাব দেওয়ার মতো সময় নেই। তিনি বলেন, জামায়াতের হাতে এখন জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক এজেন্ডা রয়েছে। এই এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতেই তাদের সময় চলে যায়, তাই বিতর্কে জড়ানোর সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম নগরীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দেন যে, যথাসময়ে নির্বাচন না হলে দেশে বড় সংকট তৈরি হতে পারে।

নির্বাচনী প্রস্তুতি ও জোটের কৌশল

জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান জানান, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের প্রস্তুতি চলছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই এবং তা তৈরি করার জন্য কাজ করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন হওয়া জাতির জন্য অপরিহার্য, অন্যথায় দেশে একটি গভীর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে।

জোটের বিষয়ে তিনি দলের কৌশল স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বর্তমানে কারো সাথে আনুষ্ঠানিক জোট না করলেও, বিভিন্ন দল ও শক্তির সাথে নির্বাচনী সমঝোতা করতে পারে। এর মাধ্যমে জামায়াত একদিকে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচয় বজায় রাখতে চাইছে, অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সাথে সমন্বয় করে নির্বাচনী সুবিধা নিতে আগ্রহী।

‘গণভোট নয়, জনগণের বিজয় চাই’

ডা. শফিকুর রহমান স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন সম্ভব নয় এবং তারা অবাস্তব কথা বা দাবি করছেন না, করবেনও না

জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তাঁর দলের লক্ষ্য স্পষ্ট করে তিনি বলেন, “আমি জামায়াতের বিজয় চাই না, জনগণের বিজয় চাই।” এছাড়া, তিনি নির্বাচনের দিন গণভোটের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নির্বাচনের দিনে গণভোটের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জেনোসাইড (গণহত্যা) হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। এই মন্তব্যটি ইঙ্গিত দেয় যে, জামায়াত নির্বাচনকালীন সহিংসতা বা অস্থিতিশীলতা এড়িয়ে যেতে চাইছে।

পিআর পদ্ধতির পক্ষে জামায়াতের অবস্থান

সাংবাদিকদের সামনে তিনি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation – PR) পদ্ধতির পক্ষে তাদের দাবি অব্যাহত রাখার কথা জানান। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই পদ্ধতিটি জনগণের স্বার্থে বাস্তবায়ন করা জরুরি।

তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “এমনকি আমরা ক্ষমতায় গেলেও কথা দিচ্ছি যে— পিআর আমরা বাস্তবায়ন করব, ইনশাআল্লাহ।” এই প্রতিশ্রুতি জামায়াতের দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচনী সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতাকে তুলে ধরে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে ছোট দলগুলোর আসন প্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়ে এবং ভোটের শতাংশের সাথে প্রাপ্ত আসনের ব্যবধান কমে আসে।

ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ এবং অপব্যবস্থাপনার সমালোচনা

জামায়াত আমির দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ইতিহাসের একটি বাঁক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতির সামনে বারবার সুযোগ এলেও যাদের সেই সুযোগের উত্তম ব্যবহার করার কথা ছিল, তারা তা না করে তার অপব্যবহার করেছে এবং নিজেদের পকেট ভরেছে।

তিনি মনে করেন, দেশপ্রেম, ভিশন, আন্তরিকতা ও সৎ নেতৃত্বের অভাবের কারণেই বারবার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। তবে, তিনি আশাবাদী যে, “২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা আর হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না।” এই মন্তব্যটি দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের বর্তমান সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য তাঁর দলের আগ্রহকে প্রকাশ করে।

জামায়াত আমিরের মন্তব্য: “দেখেন, আমাদের এতো পজিটিভ এজেন্ডা— আমরা জাতির জন্য কী করব, এগুলো ভাবতে আর বলতে বলতে সময় চলে যায়। কাউকে খোঁচানোর জন্য কিংবা কারো খোঁচার জবাব দেওয়ার সময় আমাদের নেই।”

জামায়াতের ‘ইতিবাচক এজেন্ডা’ এবং লক্ষ্য

জামায়াত আমির তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন যে, তাদের প্রধান লক্ষ্য এখন জাতির জন্য ইতিবাচক এজেন্ডা নিয়ে কাজ করা এবং জনগণের কাছে তাদের সেই পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরা। অন্য দলগুলোর সঙ্গে বাদানুবাদ বা ব্যক্তিগত আক্রমণের জবাব দিয়ে সময় নষ্ট করার পরিবর্তে তারা নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় থাকতে আগ্রহী।

এই ইতিবাচক এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী সংস্কার (যেমন পিআর পদ্ধতি), সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা, এবং দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনার পরিবর্তন। জামায়াতের এই কৌশলটি তাদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তিকে গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিতর্ক এড়িয়ে মূলধারার রাজনীতিতে মনোযোগ

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের ‘কারো খোঁচার জবাব দেওয়ার সময় আমাদের নেই’—এই মন্তব্যটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাদের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। দলটি এখন ব্যক্তিগত বা কাদা-ছোড়াছুড়ির রাজনীতি থেকে সরে এসে নীতি ও এজেন্ডাভিত্তিক রাজনীতিতে মনোযোগ দিতে চাইছে। যথাসময়ে নির্বাচনের দাবি, পিআর বাস্তবায়নের অঙ্গীকার এবং জনগণের বিজয় নিশ্চিত করার আকাঙ্ক্ষা তাদের মূল বক্তব্য। তবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হলে দেশে যে সংকট তৈরি হবে—এই হুঁশিয়ারিটি দেশের আগামী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বড় উদ্বেগের জায়গা তৈরি করেছে। আগামী দিনে জামায়াত কতটুকু নির্বাচনী সমঝোতা করতে পারে এবং তাদের ‘ইতিবাচক এজেন্ডা’ নিয়ে জনগণের কাছে কতটা পৌঁছাতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এম আর এম – ২৩৩০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button