বাংলাদেশের রাজনীতি এক নতুন উত্তেজনাপূর্ণ দিক দিয়ে আলোচিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান স্পষ্ট করে ঘোষণা দিয়েছেন, যদি জামায়াত ক্ষমতায় আসে এবং সরকার গঠন করে, তবে তিনি বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হবেন। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) রাতের দিকে ইটনা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি আয়োজিত কর্মী সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।
কর্মী সমাবেশে বক্তব্যের সারমর্ম
ফজলুর রহমান বলেন,
“মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কেউ হাত তুলেন তো দেখি… রাজাকারের পক্ষে কেউ হাত তুলেন তো দেখি… কিন্তু একটিও হাত রাজাকারদের পক্ষে ওঠে না। এরপরও এরা নির্বাচন করে সরকার গঠন করবে? ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে এরা পাস করে ফেলবে … আমি বিষ খাইয়্যাম।”
এই মন্তব্যে তিনি স্পষ্ট করে বোঝাতে চেয়েছেন, দেশের মধ্যে রাজাকারদের প্রতি সমর্থন নেই, অথচ জামায়াতের ক্ষমতায় আগ্রহ তীব্র।
তিনি আরও বলেন, যারা বেঁচে আছেন তা শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার দয়া। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার পায়ে ধরতে হয়েছিল, “ম্যাডাম আমাদের বাঁচান,” তখন তাদের বাঁচানো হয়েছিল। বর্তমানে তারা রাজনৈতিকভাবে বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের নেতা ও সমর্থকরা ধান্দাবাজ, চোর-বাটপার এবং মুনাফেক।
ফজলুর রহমান নিজেকে ‘আদর্শিক যুদ্ধের প্রার্থী’ বলে পরিচয় দেন। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের কাছে ভোট চান এবং যারা বিএনপি, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং ধানের শীষের সমর্থক।
তিনি বলেন, ভোটারের ধর্ম তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান যাই হোক, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্য নিয়েই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে এবং সেই লক্ষ্যই তার রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তি।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ফজলুর রহমানের এই চরম ঘোষণা সাধারণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাইরে। এটি কেবল ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি নয়, বরং একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা। এটি দুইটি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ:
- রাজনৈতিক সংকেত:
বিষ খাওয়ার প্রতিশ্রুতি একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ এবং সতর্কবার্তা। তিনি মনে করছেন, জামায়াতের ক্ষমতায় আসা দেশের জন্য বিপজ্জনক। এটি সমর্থকদের মধ্যে দৃঢ়তার বার্তা পৌঁছে দিতে পারে। - নির্বাচনী প্রভাব:
এই ধরনের বক্তব্য ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত যারা জামায়াতের ক্ষমতায় আগ্রহকে নেতিবাচকভাবে দেখেন। এটি বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণাকে শক্তিশালী করতে পারে।
সমালোচনা ও বিতর্ক
বিষ খাওয়ার চরম প্রতিশ্রুতি সবসময়ই সমালোচনার মুখোমুখি হয়। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, এটি কি রাজনৈতিক নাটক, নির্বাচনী কৌশল, নাকি বাস্তব প্রতিশ্রুতি?
- যদি এটি শুধুই নির্বাচনী রটনা হয়, তাহলে ভোটের পর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি?
- যদি এটি সত্যিই আত্ম-উপলব্ধি, তবে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও উত্তেজনাপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- এছাড়া, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এমন চরম প্রতিশ্রুতির কারণে নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সম্ভাব্য প্রভাব
ফজলুর রহমানের এই বক্তব্য রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
- নির্বাচনী প্রভাব: জামায়াতের ক্ষমতায় আসার বিপদের ওপর নজর রাখে ভোটাররা ফজলুর রহমানকে একটি নির্ভরযোগ্য প্রার্থী হিসেবে দেখতে পারে।
- রাজনৈতিক বার্তা: এটি শুধু ফজলুর রহমান নয়, সমগ্র বিএনপি-জোটের পক্ষ থেকে একটি বার্তা।
- জনমতগত প্রভাব: এটি জনগণকে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করতে পারে।
ফজলুর রহমানের বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘোষণা কেবল রাজনৈতিক নাটক নয়। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিবাদ, যা দেশের ভবিষ্যৎ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এই প্রার্থীর এই চরম অঙ্গীকার রাজনৈতিক সাহস, নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং জনগণের প্রতি গভীর উদ্বেগের প্রতিফলন। ভবিষ্যতে এই বক্তব্য ভোটারদের মানসিকতা, নির্বাচনী ফলাফল এবং দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
MAH – 13916 I Signalbd.com



