বাংলাদেশ

ঢাকায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি জাতিসংঘের সমবেদনা

Advertisement

ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে আঘাত হানে ৫.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প। এতে অন্তত ১১ জন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়, যা ঢাকার আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তি নরসিংদী থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।

স্থানীয় প্রশাসন এবং উদ্ধারকর্মীরা অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। আহতদের ঢাকা ও নরসিংদীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রশাসন সতর্ক করে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর সম্ভাব্য aftershock বা পুনঃকম্পনের ঝুঁকি রয়েছে।

জাতিসংঘের সমবেদনা ও সহায়তা

বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সংহতি প্রকাশ করছে। একইসাথে জরুরি সহায়তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এবং স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি যাতে পরিস্থিতি তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।”

ভূমিকম্পের প্রভাব

প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভবন ও বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। অনেক স্থাপনায় প্যানিক হবার কারণে মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। বিশেষ করে পুরোনো ও অব্যবস্থাপিত ভবনগুলোতে ক্ষতি বেশি হয়েছে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও উদ্ধারকর্মীরা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মানুষকে নিজ বাড়ি বা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে প্রবেশ না করতে বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ এবং খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য সকল প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো বাংলাদেশে জরুরি সহায়তার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা আহতদের চিকিৎসা, ত্রাণসামগ্রী ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতি এলাকা এবং পুরোনো অবকাঠামো থাকা শহরে ভূমিকম্প বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সচেতনতা ও সতর্কবার্তা

ভূমিকম্পের পর সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সতর্ক করেছেন যে, ভবিষ্যতে পুনঃকম্পন বা aftershock হতে পারে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না থাকা, নিরাপদ স্থানে অবস্থান করা এবং জরুরি পরিষেবা নম্বর প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ভূমিকম্প বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত প্রচারনা চালাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও স্বাস্থ্যহীন মানুষদের নিরাপদ স্থানে রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা ও আশপাশের জেলায় এই ভূমিকম্পের ঘটনা প্রমাণ করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের সমবেদনা ও সহায়তা, সরকারী পদক্ষেপ, স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত কর্মপরিকল্পনা এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা একত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

এই দুর্ঘটনার ফলে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রস্তুতির গুরুত্ব আবারও সামনে এসেছে।

MAH – 13915 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button