ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবনের সর্বস্ব উৎসর্গ করা শহীদদের স্মরণে এই কর্মকাণ্ড ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশে পৌঁছানোর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থিত স্মৃতিসৌধে পৌঁছান। সেখানে তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি সম্মান রক্ষী দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। একই সঙ্গে বিউগলে করুণ সুরে বাজানো হয় শহীদদের প্রতি সম্মানসূচক সঙ্গীত।
এ সময় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক), বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী তোবগের সঙ্গে স্মৃতিসৌধে উপস্থিত ছিলেন।
স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সেখানে রাখা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে বকুল ফুলের চারা রোপণ করেন। এ কর্মকাণ্ড শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভুটানের আন্তঃসাহিত্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।
বিমানবন্দর সংবর্ধনা ও আগমন
তোবগে এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ড্রুকএয়ার ফ্লাইট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের বাংলাদেশ সফর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ। তার সফরের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন একান্ত বৈঠক, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য সম্পর্কিত আলোচনা, এবং সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ।
বৈঠক ও আলোচনা
আজ বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী তোবগে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। এছাড়াও দুপুরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে সাক্ষাৎ করবেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিভিন্ন সহযোগিতার সুযোগ ও সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।
রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তোবগে তার সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেবেন। এই নৈশভোজে দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন এবং বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সম্পর্ক
ভুটান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সমন্বিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ভুটানের সমর্থন এবং রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তা স্মরণীয়। আজকের এই রাষ্ট্রীয় সফর দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ইতিমধ্যেই দু’দেশের মধ্যে শিক্ষা, বাণিজ্য, পর্যটন, কৃষি এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই সফরের মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও আরও সমৃদ্ধ হবে।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সাংস্কৃতিক বার্তা
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী যখন স্মৃতিসৌধে বকুল ফুলের চারা রোপণ করেন, তখন এটি কেবল একটি রূপক নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে শান্তি ও বন্ধুত্বের একটি প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং দেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব উপলব্ধি করানো, বিদেশি নেতাদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রতি আরও শক্তিশালী হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে বিনিময় বৃদ্ধি, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও পর্যটন ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগের সুযোগ রয়েছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের এই সফর এই উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা কেবল সরকারী পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়, নাগরিক পর্যায়ে বন্ধুত্ব ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ও বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক সংস্থা ও সাংস্কৃতিক সংস্থা একে অপরের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারবে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বকুল চারা রোপণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের প্রতীক। এটি কেবল কূটনৈতিক সফর নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের সম্পর্ক আগামী দিনে আরও মজবুত ও সমৃদ্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দু’দেশের নেতৃবৃন্দ এই ধরনের সভা ও বৈঠকের মাধ্যমে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বকে নতুন মাত্রা দিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে অঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
MAH – 13914 I Signalbd.com



