বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সহধর্মিণী আনোয়ারা আহমেদ ।বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভোগার পর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার ভোলায় জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হবে।
দেশের অন্যতম প্রবীণ রাজনীতিবিদ, একাত্তরের অন্যতম সংগঠক এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমেদের প্রয়াণে গভীর শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিটে রাজধানী ঢাকার একটি স্বনামধন্য বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা ও বিশেষত কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। আনোয়ারা আহমেদ রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও, তোফায়েল আহমেদের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন এক নীরব শক্তি এবং নির্ভরতার প্রতীক।
প্রয়াণের বিস্তারিত ও পারিবারিক ঘোষণা
আনোয়ারা আহমেদের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তোফায়েল আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী মো. হাচনাইন এবং তাঁদের পারিবারিক সূত্র। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে তোফায়েল আহমেদের রাজনৈতিক সহকর্মী, ভোলা এলাকার মানুষ এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুকালে তিনি তাঁর স্বামী তোফায়েল আহমেদ, একমাত্র কন্যা ডা. তাছলিমা আহমেদ মুন্নি, জামাতা ডা. তৌহিদসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন। তাঁর কন্যা ডা. তাছলিমা আহমেদ মুন্নি একজন সুপরিচিত চিকিৎসক। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, তাঁর এই প্রয়াণ তোফায়েল আহমেদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
দীর্ঘদিনের রোগ: যে কারণে চলে গেলেন আনোয়ারা আহমেদ
পারিবারিক সূত্র ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আনোয়ারা আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত জটিল রোগে ভুগছিলেন। এই রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি দেশের ভেতরে এবং বাইরেও চিকিৎসা নিয়েছেন। কিডনি সংক্রান্ত অসুস্থতা ছাড়াও বার্ধক্যজনিত অন্যান্য সমস্যা তাঁকে দুর্বল করে দিয়েছিল। গত কয়েকদিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁর এই দীর্ঘ অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি নীরবে তাঁর স্বামীর পাশে থেকেছেন এবং তাঁকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
আনোয়ারা আহমেদের ব্যক্তিগত জীবন ও পরিচয়
আনোয়ারা আহমেদের জন্ম এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তিনি ছিলেন ভোলা জেলার সম্ভ্রান্ত তালুকদার বাড়ির সফিজুল ইসলাম তালুকদারের জ্যেষ্ঠ কন্যা। ১৯৬৪ সালে তিনি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তোফায়েল আহমেদ তখন ছিলেন একজন উদীয়মান ছাত্রনেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি। আনোয়ারা আহমেদ রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক ও ধর্মপ্রাণ নারী। তোফায়েল আহমেদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের উত্থান-পতনে তিনি সবসময় পাশে থেকেছেন, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নীরব আত্মত্যাগের উদাহরণ।
জানাজা ও দাফন প্রক্রিয়া: ভোলার বাংলাবাজারে শেষ বিদায়
আনোয়ারা আহমেদের মরদেহ ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর পৈতৃক নিবাস ভোলায় নিয়ে যাওয়া হবে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে তাঁর মরদেহ ভোলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে নেওয়া হবে। এরপর বাদ জুমা বাংলাবাজার ফাতেমা খানম জামে মসজিদের পাশে কবর স্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। এই মসজিদে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তোফায়েল আহমেদের রাজনৈতিক সহকর্মী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামবে বলে আশা করা হচ্ছে। মরহুমার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পারিবারিকভাবে সকলের কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ঢেউ ও প্রতিক্রিয়া
আনোয়ারা আহমেদের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং মরহুমার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শোকবার্তা ও বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তারা আনোয়ারা আহমেদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তোফায়েল আহমেদের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গী হিসেবে তাঁর অবদান স্মরণ করেন। তারা উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক নেতাদের স্ত্রীদের নীরব সমর্থন ও ত্যাগ অনেক ক্ষেত্রেই জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তোফায়েল আহমেদের স্ত্রী আনোয়ারা আহমেদের প্রয়াণ তোফায়েল আহমেদ পরিবার এবং তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য এক গভীর আঘাত। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর তাঁর এই চলে যাওয়া দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে একটি অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। একজন প্রবীণ ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের জীবনের অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তিনি ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। তাঁর মতো নিবেদিতপ্রাণ মানুষের বিদায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জনজীবনের নেপথ্যের মানুষগুলোও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভোলায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার পর শোক কাটিয়ে তোফায়েল আহমেদ কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, সেদিকেই সকলের দৃষ্টি থাকবে।
এম আর এম – ২৩১৮,Signalbd.com



