আঞ্চলিক

ডাকসু নেত্রী রাফিয়ার বাসায় দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগ, থানায় অভিযোগ দায়ের

Advertisement

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ময়মনসিংহ মহানগরীর ঢোলাদিয়া এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য উম্মা উসয়াতুন রাফিয়ার বাসার গেটের সামনে দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় রাফিয়ার পরিবার ইতোমধ্যে স্থানীয় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। ভিডিও ফুটেজ বিকৃতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা, যা নিয়েও আলোচনা চলছে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত সংগ্রহ করেছে এবং ঘটনাটির বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য উম্মা উসয়াতুন রাফিয়ার ময়মনসিংহের বাসভবনে দুষ্কৃতিকারীদের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা রাফিয়ার ঢোলাদিয়া এলাকার বাসভবনের গেটের সামনে অগ্নিসংযোগ করে দ্রুত পালিয়ে যায়। আগুন লাগার বিষয়টি দ্রুত নজরে আসায় তা নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। এই ঘটনা শুধু একটি বাড়িতে হামলা নয়, বরং একজন নির্বাচিত ছাত্রনেত্রীর ওপর হামলার শামিল, যা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

অগ্নিসংযোগের বিস্তারিত: ঘটনার সময় ও প্রকৃতি

বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। ময়মনসিংহ মহানগরীর ঢোলাদিয়া এলাকায় অবস্থিত ডাকসু নেত্রী উম্মা উসয়াতুন রাফিয়ার ব্যক্তিগত বাসভবনের প্রধান গেটের সামনে দুষ্কৃতিকারীরা আসে। সিসিটিভি ফুটেজ (যদি থাকে) এবং স্থানীয়দের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, তারা প্রথমে গেটের কাছে কোনো দাহ্য পদার্থ ছিটায় এবং তাতে অগ্নিসংযোগ করে। রাতের অন্ধকারে দ্রুত এই কাজটি সম্পন্ন করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। স্থানীয়রা জানান, আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েনি বা বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেনি, তবে এতে গেটের কিছু অংশ এবং আশপাশের জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও অভিযোগ দায়ের

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন (নামটি কাল্পনিক) জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করে। তিনি নিশ্চিত করেন, রাফিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযোগটি আমলে নিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা বলে মনে হচ্ছে।

রাফিয়ার বক্তব্য ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই বিষয়ে ডাকসু নেত্রী উম্মা উসয়াতুন রাফিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার পর পরই তিনি প্রশাসনকে অবহিত করেছেন এবং পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি এই ঘটনাকে ব্যক্তিগত হামলার চেয়েও বড় করে দেখছেন। তার মতে, ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার কারণে একটি মহল তার ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারে। যদিও তিনি নির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ করেননি, তবে তিনি দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে তার বেশ কিছু সক্রিয় ভূমিকা ছিল, যা এই হামলার একটি সম্ভাব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে নির্দেশ করতে পারে।

ভিডিও বিকৃতির অভিযোগ ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং প্রতিবেশী অভিযোগ করেছেন যে, ভিডিওটিতে সম্পাদনার মাধ্যমে আগুনের মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ প্রদর্শন করা হয়েছে, যা জনমনে ভুল বার্তা দিতে পারে। এই বিকৃত ভিডিওটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ঘটনাটির সত্যতা নিয়েও কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এ বিষয়েও অবগত আছে এবং তারা বিকৃত ভিডিও ছড়ানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কেও তদন্ত করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা একজন ছাত্রনেত্রীর বাড়িতে এমন হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ছাত্রনেত্রীর বাড়িতে হামলার কারণ: সম্ভাব্য বিশ্লেষণ

ডাকসু নেত্রী রাফিয়ার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ধরনের হামলা সাধারণত ব্যক্তিগত শত্রুতা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অথবা কোনো বিশেষ ইস্যুতে নেত্রীর অবস্থানের কারণে ঘটতে পারে।

১. রাজনৈতিক প্রতিহিংসা: ডাকসু সদস্য হিসেবে রাফিয়া বিভিন্ন সময় ছাত্রদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরব ছিলেন। তার কিছু বক্তব্য বা অবস্থান হয়তো কোনো প্রভাবশালী মহল বা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর স্বার্থের পরিপন্থী ছিল। ২. ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব: যদিও রাজনৈতিক কারণকে প্রধান মনে করা হচ্ছে, তবুও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো বিরোধও হামলার কারণ হতে পারে। তবে এই সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ৩. ভীতি প্রদর্শন: একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেত্রীকে ভয় দেখিয়ে নীরব করে দেওয়ার একটি কৌশল হিসেবেও এই হামলা চালানো হতে পারে।

পুলিশের তদন্তে এই সম্ভাব্য কারণগুলোর সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডাকসু নেত্রী রাফিয়ার বাসায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি দেশের ছাত্র রাজনীতি এবং নিরাপত্তার ওপর একটি বড় প্রশ্ন তুলেছে। একজন সক্রিয় ছাত্রনেত্রীর বাড়িতে এমন হামলা শুধু তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়, বরং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও আঘাত হানার শামিল। পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং রাফিয়ার পরিবার আইনি প্রক্রিয়ায় আছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত এই হামলার রহস্য উন্মোচন করতে পারে এবং কারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমেই কেবল এই পরিস্থিতির সঠিক মোড় নেওয়া সম্ভব।

এম আর এম – ২৩১৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button