উগান্ডাকে ৪২-২২ পয়েন্টে পরাজিত করে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক সোহরাওয়ার্দী স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হয়। কিন্তু জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারেনি রূপালি আক্তার ও তার সতীর্থরা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৪৩-১৮ পয়েন্টে হেরে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান দ্বিতীয় ম্যাচের পর এক চ্যালেঞ্জে পড়ে গেছে।
উল্লেখ্য, প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল আশাব্যঞ্জক। উগান্ডার বিরুদ্ধে শক্তিশালী জয় ও জার্মানির ওপর ৫৭-২৭ পয়েন্টে জয় দলকে আত্মবিশ্বাসী করেছিল। তবে ভারতের মতো অভিজ্ঞ এবং শক্তিশালী দলের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া এক অন্যরকম পরীক্ষা ছিল।
ভারতের আধিপত্য এবং বাংলাদেশের চাপে থাকা
মিরপুরের সোহরাওয়ার্দী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরু থেকেই ভারতের আধিপত্য চোখে পড়ে। শারীরিক গড়ন, টেকনিক, এবং কৌশলে ভারতের দল সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিল। প্রথম মিনিট থেকেই ভারত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করে।
ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিটে ভারত প্রথম পয়েন্ট তুলে নেয়। পরের রেইডে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সমতা আনার চেষ্টা করা হলেও, ভারত দলে অভিজ্ঞ ঋতু নেগি এবং সোনালী বিষ্ণু সিং ভারতের আধিপত্য প্রমাণ করেন। রূপালি ও বৃষ্টি কোর্টে দৃঢ় চেষ্টা করলেও ভারতের শক্তির সামনে অপ্রতুল ছিল।
ম্যাচের প্রথমার্ধ
প্রথমার্ধে ভারতের আধিপত্য স্পষ্ট। বাংলাদেশ ২৯-৮ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল। ভারত একের পর এক রেইড সম্পন্ন করে পয়েন্ট যোগ করছিল। প্রতিরোধের চেষ্টা করেও বাংলাদেশের রূপালি আক্তার এবং বৃষ্টি মুন্সিয়ানা ভারতের ট্যাকল এবং রেইডের তালে তাল মিলাতে পারেনি।
৬ মিনিটের মধ্যে ভারত চম্পা ঠাকুরকে আউট করে বাংলাদেশকে পুরোপুরি অলআউট করে ১২-৫ পয়েন্টে লিড নেয়। এরপরও রূপালি ও বৃষ্টি মাঝেমাঝে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে ভারত-বাংলাদেশের লড়াই
বিরতির পরও ভারত তাদের আধিপত্য ধরে রাখে। ম্যাচে বাংলাদেশকে তৃতীয়বারের মতো অলআউট করে ভারত ৪২-১৫ পয়েন্টে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা সহজেই ৪৩-১৮ পয়েন্টে বাংলাদেশকে পরাজিত করে।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ এবং খেলোয়াড়রা স্বীকার করেছেন যে, ভারতের সঙ্গে ম্যাচে শারীরিক শক্তি ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। রূপালি আক্তার বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু ভারতের মতো বিশ্বসেরা দলের বিপক্ষে সব সময় সমানভাবে লড়াই করা সম্ভব নয়। তবে আগামী ম্যাচে আমরা ভালো খেলার চেষ্টা করব।”
আগামী চ্যালেঞ্জ: থাইল্যান্ড
বাংলাদেশ দলের পরবর্তী ম্যাচ হবে ২২ নভেম্বর, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ থাইল্যান্ড। এই ম্যাচে জয় পেলে সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে লাল-সবুজদের। দলের কোচ আশা প্রকাশ করেছেন যে, আগামী ম্যাচে খেলোয়াড়রা আগের দুই ম্যাচের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মাঠে ভাল পারফরম্যান্স দেখাবে।
ভারতের পরবর্তী ম্যাচ
ভারতের পরবর্তী প্রতিপক্ষ হবে জার্মানি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলের লক্ষ্য টানা জয় ধরে রাখা এবং সেমিফাইনালে নিজের অবস্থান শক্ত করা।
বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ
বাংলাদেশ দলের শক্তি ছিল তাদের আক্রমণাত্মক রেইড কৌশল এবং দ্রুত গতির খেলোয়াড়দের উপস্থিতি। তবে ভারতের মতো অভিজ্ঞ দলের সঙ্গে ট্যাকল ও ডিফেন্সে অভাব স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। বিশেষ করে রূপালি আক্তার এবং বৃষ্টি মুন্সিয়ানা যতই চেষ্টা করেছিল, ভারতের অভিজ্ঞ ট্যাকল ও সমন্বিত খেলাকে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের দল যদি আগামী ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এবং রেইডের সময় আরও ধৈর্য্য ধরে খেলে, তাহলে থাইল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে জয় সম্ভব।
সমর্থক এবং দেশের প্রত্যাশা
দেশের কাবাডি প্রেমীরা এখনও দলের প্রতি বিশ্বাস রাখছেন। সামাজিক মাধ্যমে সমর্থকরা বলেছেন, “ভারতের মতো চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে হার স্বাভাবিক, মূল কথা হলো আগামী ম্যাচে জয়।”
বিশ্বকাপ কাবাডি ২০২৫ এ বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন স্পষ্ট – প্রথমে থাইল্যান্ডকে হারানো এবং এরপর সেমিফাইনালে পৌঁছে দেশের জন্য গৌরব অর্জন।
- উগান্ডাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, জার্মানির বিরুদ্ধে জয়।
- তৃতীয় ম্যাচে ভারতকে ৪৩-১৮ পয়েন্টে হারতে হলো।
- প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল ভারতের শারীরিক শক্তি ও অভিজ্ঞতা।
- বাংলাদেশ দলের পরবর্তী ম্যাচ ২২ নভেম্বর থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
- সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা রক্ষা করতে হলে থাইল্যান্ডকে হারানো অপরিহার্য।
MAH – 13904 I Signalbd.com



