বানিজ্য

বাংলাদেশিদের জন্য ফের ভারতীয় বিজনেস ভিসা চালু

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে ভিসা জটিলতার কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থার পর অবশেষে বাংলাদেশিদের জন্য ব্যবসায়িক (বিজনেস) ভিসা ইস্যু করার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে ভারত। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বুধবার (১৯ নভেম্বর) এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সীমিত মানবসম্পদ ও সক্ষমতার মধ্যেও এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং জরুরি প্রয়োজনের আবেদনগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হচ্ছে। এই ঘোষণা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহলের জন্য স্বস্তিদায়ক, বিশেষ করে যারা ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি বা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসারে আগ্রহী।

হাইকমিশনারের ঘোষণা ও প্রেক্ষাপট

হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এই ঘোষণাটি দেন রাজধানীর বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশন প্রাঙ্গণে আয়োজিত নেটওয়ার্কিং ও জ্ঞান বিনিময় অনুষ্ঠান ‘ফার্মা কানেক্ট’-এ।

সাময়িক স্থগিতাদেশের কারণ: হাইকমিশনার জানান, পূর্বে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু ভিসা আবেদন কেন্দ্রে সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এতে সাধারণ এবং ব্যবসায়িক ভিসাপ্রত্যাশীরা দুর্ভোগে পড়েছিলেন।

পুনরায় শুরু: তিনি নিশ্চিত করেন যে, এখন সীমিত কর্মী দিয়েই প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিসা ইস্যুর কাজ পুনরায় শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিজনেস ভিসা আবার ইস্যু করা হচ্ছে। জরুরি ভিসা আবেদনগুলো আমরা দ্রুত প্রক্রিয়ায় করার চেষ্টা করছি।”

যোগাযোগের সুবিধা: তিনি আরও জানান, ব্যবসায়িক ভিসার প্রয়োজন হলে আবেদনকারীরা হাইকমিশনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন এবং তাদের কাজ দ্রুত হবে।

ফার্মা কানেক্ট অনুষ্ঠানের গুরুত্ব

ফার্মা কানেক্ট অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের একটি সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ: ভারতের বিশ্ববিখ্যাত ফার্মাসিউটিক্যাল মেলা সিপিএইচআই–পিএমইসি ইন্ডিয়া ২০২৫-এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণকে সামনে রেখে এই আয়োজন করা হয়। এই প্রদর্শনীটি আগামী ২৫-২৭ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে।

প্রযুক্তি ও সহযোগিতা: বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ফার্মা কানেক্টের মতো উদ্যোগ দু’দেশের মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তর, গবেষণা ও উন্নয়ন সহযোগিতা এবং সাপ্লাই চেইন সংযুক্তীকরণ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ ও দাবি

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ভিসা জটিলতা নিয়ে তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন এবং দ্রুত এর সমাধানের দাবি জানান।

ভিসা জটিলতার প্রভাব: অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. জাকির হোসেন উল্লেখ করেন, ভিসা জটিলতার কারণে এ বছর সিপিএইচআই–পিএমইসি প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাশিত সংখ্যক প্রতিনিধি যেতে পারছেন না। সাধারণত কয়েকশ পেশাজীবী অংশ নিলেও এবার মাত্র ৮৩ জন আবেদন করেছেন।

সহজীকরণের দাবি: তিনি ব্যবসায়িক ভিসার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার অনুরোধ জানান এবং প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া আবেদনকারীদের বিশেষ বিবেচনায় দ্রুত ভিসা প্রদানের আহ্বান জানান।

পণ্য পরিবহন: শুধু ভিসাই নয়, দু’দেশের মধ্যে সড়কপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজীকরণেরও দাবি করেন তারা। স্থলসীমান্তের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার ওপর জোর দেন।

অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসায়িক ভিসা পুনরায় চালু হওয়া এবং সাপ্লাই চেইন জোরদার করার আলোচনা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।

কাঁচামাল আমদানি: আব্দুল মুক্তাদির জানান, বাংলাদেশে কাঁচামাল শিল্প বাড়ছে। ভারত এক্ষেত্রে আরও অগ্রসর হওয়ায় স্থলসীমান্তের মাধ্যমে ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি করলে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে। বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের জন্য কাঁচামাল আমদানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি: ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাতায়াত বাড়বে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

নীতিনির্ধারণী আলোচনা: হাইকমিশনারের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সচিবের যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত সরকার বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী।

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ও নতুন নির্দেশনা

ব্যবসায়িক ভিসা প্রত্যাশীদের জন্য ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন নির্দেশনা জানা অত্যন্ত জরুরি।

অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র: জরুরি ব্যবসায়িক প্রয়োজন রয়েছে, এমন আবেদনগুলোকেই বর্তমানে দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষ যোগাযোগ: আবেদনকারীদের উচিত সাধারণ চ্যানেলের পাশাপাশি হাইকমিশনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে অবহিত করা। এটি প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করতে সাহায্য করতে পারে।

নিরাপত্তা ও সক্ষমতা: হাইকমিশনারের বক্তব্যে নিরাপত্তা ও সীমিত সক্ষমতার কথা উঠে আসায় এটা স্পষ্ট যে, ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং হয়তো সব আবেদন কেন্দ্রে এখনো পুরো দমে কাজ শুরু হয়নি।

কূটনৈতিক গুরুত্ব

নির্বাচনী পরিবেশ এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের সময়ে ব্যবসায়িক ভিসা পুনরায় চালু করার ঘোষণাটি কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

সুসম্পর্ক বজায় রাখা: এই পদক্ষেপটি ইঙ্গিত দেয় যে, অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।

আস্থার প্রতীক: ভিসা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করবে এবং সীমান্ত বাণিজ্য স্বাভাবিক করতে সহায়ক হবে।

আন্তঃসীমান্ত সংযোগ: দু’দেশের মধ্যে সড়কপথে পণ্য পরিবহন সহজ করার দাবিটি আন্তঃসীমান্ত সংযোগ বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ, যা আঞ্চলিক বাণিজ্যের জন্য অপরিহার্য।

“বাংলাদেশে কাঁচামাল শিল্প বাড়ছে। ভারত এক্ষেত্রে আরও অগ্রসর। স্থলসীমান্ত থাকার কারণে ভারত থেকে কাঁচামাল আমদানি করলে আমরা আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে পারি।” — আব্দুল মুক্তাদির (সভাপতি, বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন)

বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ব্যবসায়িক ভিসা পুনরায় চালু করার ঘোষণা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন করে গতি দেবে। যদিও ভিসা জটিলতার কারণে ফার্মাসিউটিক্যালস মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সীমিত হয়েছে, তবুও হাইকমিশনারের আশ্বাস এবং জরুরি আবেদনগুলো দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের উদ্যোগ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহলে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। এখন প্রয়োজন দ্রুত এবং সম্পূর্ণভাবে ভিসা কার্যক্রম স্বাভাবিক করা এবং সড়কপথে পণ্য পরিবহনকে আরও সহজ করা, যাতে উভয় দেশই তাদের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও শক্তিশালী হয়।

এম আর এম – ২৩১৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button