বাংলাদেশ

‘বিজয় দিবসে এবারও জাতীয় প্যারেড হচ্ছে না’

Advertisement

এ বছর মহান বিজয় দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় কুচকাওয়াজ (প্যারেড) আয়োজিত হচ্ছে না। টানা দ্বিতীয়বারের মতো এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তবে প্যারেড বাতিল হলেও বিজয় দিবস ঘিরে অন্য কর্মসূচি আগের চেয়ে আরও বেশি ও ব্যাপক পরিসরে পালিত হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান যে, বিজয় দিবস আগের বছরগুলোতে যেভাবে পালন হয়েছে, এবারও একইভাবে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, গতবারও বিজয় দিবসের প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়নি এবং এবারও হচ্ছে না।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “বিজয় দিবস আগে যেভাবে পালন হয়েছে এবারও একইভাবে হবে। আগের থেকে এবার আরও বেশি কর্মসূচি পালন হবে। তবে গতবারও প্যারেড হয়নি, এবারও প্যারেড হচ্ছে না।” তিনি আরও জানান, শুধু ঢাকার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডেই নয়, জেলা বা উপজেলা স্তরেও কুচকাওয়াজ বা ডিসপ্লে আয়োজিত হবে না।

প্যারেড বাতিল এবং নিরাপত্তা শঙ্কা

বিজয় দিবসের মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ বাতিল করার নির্দিষ্ট কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করা হয়নি। তবে গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর যখন প্যারেড বাতিল হয়েছিল, তখন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যস্ত রয়েছে।

অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজয় দিবস উদযাপন বা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায়ের পর দেশে কোনো ধরনের নাশকতা বা অস্থিরতার শঙ্কা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার মামলার রায়ের পর বা বিজয় দিবস উদযাপন নিয়ে কোনো ধরনের নাশকতা-অস্থিরতার শঙ্কা নেই।” যদিও নিরাপত্তা বিষয়ে শঙ্কা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, তবুও কুচকাওয়াজ কেন বাতিল করা হলো, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

গত বছরের পূর্ব পটভূমি ও কর্মসূচি

গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কারণে মহান বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়নি। গত বছর বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের পরিবর্তে গোটা বাংলাদেশে ‘বিজয় মেলা’ আয়োজন করা হয়েছিল।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, এ বছর গত বারের তুলনায় আরও ব্যাপক পরিসরে বিজয় দিবস আয়োজিত হবে। কুচকাওয়াজ বা কুচকাওয়াজ বা ডিসপ্লে না হলেও বিজয় দিবস উপলক্ষে অন্যান্য যে সকল কর্মসূচি প্রতি বছর পালিত হয়, যেমন জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোকসজ্জা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি এবারও অনুষ্ঠিত হবে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

বিজয় দিবসের মতো জাতীয় উৎসবে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ বাতিল করায় দেশের রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

  • আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া (প্রতিযোগীর কন্টেন্ট অনুযায়ী): সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে। তাদের পক্ষ থেকে (তাদের সামাজিক মাধ্যম পাতায়) মন্তব্য করা হয়েছে যে, “পাকিস্তানের পরাজয়ের দিনে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ মেনে নিতে পারছে না ইউনূসের সার্কাসের সঙ্গীর, দেশকে আরেকবার শত্রু মুক্ত করতে হবে।” এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে এবং সরকারকে এর জন্য দায়ী করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং বিজয় দিবসের মূল উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে জনগণকে বঞ্চিত করবে।

বিজয় দিবস উদযাপনের গুরুত্ব

প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয় দিবস হিসাবে পালিত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতীয় সেনা এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল, যার ফলস্বরূপ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায়।

  • ঐতিহ্যবাহী কুচকাওয়াজ: জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়। এই অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনী, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এই কুচকাওয়াজ মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি ঐতিহ্যবাহী মাধ্যম।
  • বিজয় মেলার আয়োজন: গত বছর কুচকাওয়াজ বাতিলের পর আয়োজিত বিজয় মেলাতে মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস নিয়ে আলোচনা, দেশীয় সংস্কৃতি ও পণ্যের প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা প্রাধান্য পেয়েছিল। এবার সেই আয়োজনের পরিসর আরও বাড়ানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সাংবাদিকদের প্রশ্ন

বিজয় দিবসের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। বিশেষ করে, সম্প্রতি ‘ডিবি’ পরিচয়ে সাংবাদিককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি আশ্বাস দেন, তদন্তের পর এ বিষয়ে তিনি তথ্য জানাতে পারবেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, দেশের স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও সতর্ক ও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

“বিজয় দিবস আগে যেভাবে পালন হয়েছে এবারও একইভাবে হবে। আগের থেকে এবার আরো বেশি কর্মসূচি পালন হবে। তবে গতবারও প্যারেড হয়নি, এবারও প্যারেড হচ্ছে না।” — লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা)

টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিজয় দিবসের জাতীয় কুচকাওয়াজ বাতিলের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জাতীয় উৎসবে একটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে কোনো নাশকতার শঙ্কা নাকচ করেছেন এবং জানিয়েছেন যে অন্যান্য কর্মসূচি আরও ব্যাপক হবে, তবুও সশস্ত্র বাহিনীর প্যারেড বাতিল করা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের বিজয় উদযাপনের ঐতিহ্যে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে। সরকারকে দ্রুত কুচকাওয়াজ বাতিলের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশের মানুষ যেন পূর্ণ ভাবগাম্ভীর্য ও উদ্দীপনার সাথে স্বাধীনতা অর্জনের এই মহান দিনটি উদযাপন করতে পারে।

এম আর এম – ২৩০৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button