রাজনীতিঅন্যান্য

জামায়াতসহ সমমনা ৮ দলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা: ৭ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ

Advertisement

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং চলমান রাজনৈতিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি রাজনৈতিক দল। পাঁচ দফা দাবিতে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে এই জোট। বুধবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে দলগুলোর নেতারা এই কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন। নেতারা ঘোষণা করেন, তাদের মূল ৫ দফা দাবি থেকে তারা কোনোভাবেই সরে আসছেন না এবং আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না হলে তারা যেকোনো ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত মানবেন না। তারা একইসঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

সমমনা আট দলের জোট ও তাদের নেতৃত্ব

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তার সমমনা আরও সাতটি ইসলামী ও ডানপন্থী দল মিলে এই জোট গঠন করেছে। এই জোটের নেতারা লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক কৌশল ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করেন।

সমমনা দলগুলো হলো:

  • বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
  • ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
  • বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • খেলাফত মজলিস
  • নেজামে ইসলাম পার্টি
  • বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
  • বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি
  • জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)

বুধবারের বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ-সহ অন্যান্য শরিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নেতারা এই জোটের পরিধি ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন, যা বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য তৈরির সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

আট দলের মূল ৫ দফা দাবি

সমমনা আট দল তাদের আন্দোলনের মূল ভিত্তি হিসেবে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দাবিকে সামনে এনেছে। এই দাবিগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামোকে ঘিরে আবর্তিত।

দাবিগুলো হলো:

১. জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি: জুলাই মাসে জনগণের দাবির মুখে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিত্তি বা সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা। ২. নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন করা, যাতে জনগণ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে তাদের মতামত দিতে পারে। ৩. পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন: প্রচলিত আসনের ভিত্তিতে নির্বাচনের পরিবর্তে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation – PR) পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। ৪. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা: একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনের আগে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। ৫. জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা: জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের সময় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া দৃশ্যমান ও দ্রুত সম্পন্ন করা। ৬. জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা: জাতীয় পার্টি এবং সাবেক ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা।

এই দাবিগুলো মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর অতীতে চালানো দমন-পীড়নের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়।

নতুন কর্মসূচির বিস্তারিত: ৭ বিভাগীয় শহরে সমাবেশ

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এই জোট আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক সমাবেশ করবে। এই সমাবেশগুলোর মাধ্যমে তারা তাদের পাঁচ দফা দাবি জনগণের সামনে তুলে ধরবেন এবং জনমত গঠনের চেষ্টা করবেন।

সমাবেশগুলোর সম্ভাব্য তারিখ ও স্থান (সাধারণত বিভাগের প্রধান শহর):

  • ৩০ নভেম্বর: চট্টগ্রাম বা সিলেট বিভাগীয় শহর।
  • ০১ ডিসেম্বর: রাজশাহী বা রংপুর বিভাগীয় শহর।
  • ০২ ডিসেম্বর: খুলনা বা বরিশাল বিভাগীয় শহর।
  • ০৩ ডিসেম্বর: ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর।
  • ০৪ ডিসেম্বর: (পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্য কোনো বিভাগ বা বড় জেলা)
  • ০৫ ডিসেম্বর: (আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে)
  • ০৬ ডিসেম্বর: ঢাকা মহানগরীতে প্রধান সমাবেশ।

এই সমাবেশের মাধ্যমে জোটটি তাদের দাবি আদায়ের পাশাপাশি নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করতে চায়। তারা একইসঙ্গে রাজপথে আন্দোলন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: সুবিধা দেওয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

আট দলের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি বিশেষ কোনো দলকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে তারা তা মেনে নেবেন না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিটিকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। সম্প্রতি ডিসি-এসপিদের বদলি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে লটারির মাধ্যমে বদলির দাবি জানানোর একদিন পরই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। এটি প্রমাণ করে, নির্বাচনের পূর্বে প্রশাসন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার বিষয়টি তাদের আন্দোলনের প্রধান এজেন্ডা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই জোটের ধারাবাহিক কর্মসূচি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর সংস্কারের বিষয়ে চাপ আরও বাড়াবে।

বৃহত্তর ঐক্য তৈরির ইঙ্গিত ও নির্বাচনের প্রস্তুতি

আট দলের নেতারা তাদের জোটের পরিধি বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারা মনে করেন, তাদের ৫ দফা দাবির সাথে দেশের আরও অনেক রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী একমত। এই দাবির ভিত্তিতে বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হতে পারে, যা আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

নেতারা স্পষ্ট করেছেন যে, তারা একদিকে যেমন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, তেমনি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে তাদের সুবিধা হবে বলে তারা মনে করছেন। এই পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য তারা তাদের সাংগঠনিক কৌশল ও প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

হামিদুর রহমান আযাদের বক্তব্য

“পাঁচ দফা দাবি থেকে আমরা এক চুলও নড়ছি না। আগামী নির্বাচনে অবশ্যই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। যদি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো দলকে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা হয়, তবে এই ৮ দল তা কোনোভাবেই মানবে না।” — হামিদুর রহমান আযাদ (সহকারী সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী)

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের এই নতুন কর্মসূচি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করল। ৭ বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক সমাবেশের মাধ্যমে তারা তাদের ৫ দফা দাবিকে আরও জনমুখী করতে চায়। নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য প্রশাসন ও প্রক্রিয়াগত সংস্কারের ওপর জোর দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য। এই জোটের পরিধি বাড়ার সম্ভাবনা দেশের ডানপন্থী রাজনৈতিক ধারায় একটি শক্তিশালী ঐক্যের ইঙ্গিত দেয়, যা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করতে পারে। এই কর্মসূচির ফলে সরকারের ওপর চাপ এবং জনমনে রাজনৈতিক সচেতনতা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

এম আর এম – ২৩০০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button