রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের হারমনি হলে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সুধী সমাবেশ। ইসলামী নেতৃত্ব ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এতে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, এবং পরিচালনা করেন মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্য
মাওলানা ফজলুর রহমান তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “পাকিস্তান সবসময় বাংলাদেশের কল্যাণ, উন্নতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা কামনা করে। বাংলাদেশ আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। অতীতের সকল বিষয় আমরা ইতিবাচকভাবে ভোলার চেষ্টা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু বিশ্বে অনেক জায়গায় অশান্তি ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে, ফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপর অব্যাহত সহিংসতা, চেচনিয়ার পুরনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের বিবেককে আঘাত করছে। মুসলিমরা যদি পারস্পরিক ঐক্য রক্ষা করে, তবে অন্যরা আমাদের ওপর হামলার সুযোগ পাবে না।”
মাওলানা ফজলুর রহমান এই বিষয়েও জোর দেন যে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তান সবসময় মুসলিম ও অমুসলিম সবার অধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছে। অমুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় কর্তব্য।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন:
- মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, জমিয়তের সিনিয়র সহ-সভাপতি
- মাওলানা আব্দুল গফুর হায়দারী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের মহাসচিব
- মাওলানা শফিকুর রহমান কাসেমী, জমিয়তে উলামা নেপালের সহ-সভাপতি
এছাড়া অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন:
- ডা. জাহিদ হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
- মুজিবুর রহমান মঞ্জু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান
- অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব
- আব্দুল হান্নান মাসউদ, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক
- ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান
- ইকবাল হোসেন, জাগপার সাধারণ সম্পাদক
- তারেক রহমান, আমজনতার পার্টির সাধারণ সম্পাদক
- মুফতি ফখরুল ইসলাম, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব
- মাওলানা এনামুল হক মুসা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব
- মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসউদ খান, নেজামে ইসলাম পার্টির প্রচার সম্পাদক
এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশের মূল বার্তা
সমাবেশে বক্তারা বারবার ইসলামের শান্তি ও মুসলিম ঐক্য এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্বে জোর দেন। বক্তারা মনে করিয়ে দেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমদের ওপর হামলার মূল কারণ পারস্পরিক বৈরিতা ও অনৈক্য।
এছাড়া বক্তারা ফিলিস্তিন, চেচনিয়া এবং অন্যান্য মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার আহ্বান জানান।
সমাবেশে বাংলাদেশ-সম্পর্কিত উদ্যোগ
মাওলানা ফারুক ও অন্যান্য নেতারা বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য। তারা দৃঢ়ভাবে আশা প্রকাশ করেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণ এবং মানবাধিকার রক্ষায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্ব
সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তান ও নেপালের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে উল্লেখযোগ্য। বক্তারা বলেন, “মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।”
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
সমাবেশে উপস্থিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা উল্লেখ করেন, “ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমন্বয় দেশের সামাজিক শান্তি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যুব সমাজকে সংঘাতমুক্ত, মানবিক এবং নৈতিক দিক নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের সমাবেশ অপরিহার্য।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের এই সমাবেশ কেবল ধর্মীয় নেতাদের মিলনস্থল নয়, বরং এটি শান্তি, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্যের বার্তা ছড়ানোর প্ল্যাটফর্ম। বক্তারা সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশ সমাপ্ত করেন।
সমাবেশে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন, এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এবং বিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা এবং ইসলামী মূল্যবোধকে শক্তিশালী করবে।
MAH – 13875 I Signalbd.com



