বানিজ্য

২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের নতুন দাম ২ লাখ ৬ হাজার ৯০৮ টাকা

Advertisement

দেশের বাজারে আরও এক দফা স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য হ্রাস পাওয়ায় এই দাম কমানো হলো। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে বাজুসের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতি ভরিতে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৬ হাজার ৯০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এই দর বুধবার (১৯ নভেম্বর) থেকেই কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন। এই নিয়ে চলতি বছর দেশে স্বর্ণের দাম একাধিকবার সমন্বয় করা হলো, যা দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

স্বর্ণের নতুন দর তালিকা ও ক্যারেট ভেদে পার্থক্য

বাজুসের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯ নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া স্বর্ণের দামের তালিকা নিম্নরূপ:

  • ২২ ক্যারেট: প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৯০৮ টাকা। যা পূর্বে ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টাকা।
  • ২১ ক্যারেট: প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯৫ টাকা। পূর্বে এই ক্যারেটের দাম ছিল ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮০১ টাকা।
  • ১৮ ক্যারেট: প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৯১ টাকা। যা আগের দরের চেয়ে কিছুটা কম, যেখানে দাম ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯৯ টাকা।
  • সনাতন পদ্ধতি: সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬১ টাকা। যা পূর্বের দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ৭১৮ টাকা থেকে কমেছে।

অর্থাৎ, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ক্ষেত্রে প্রতি ভরিতে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা হ্রাস পেয়েছে। এই দাম হ্রাসের কারণ হিসেবে বাজুস স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের মূল্য হ্রাসকে উল্লেখ করেছে।

দাম কমানোর কারণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) তাদের বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করেছে যে, স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ স্বর্ণ বা তেজাবি স্বর্ণের দাম কমে যাওয়ায় তারা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজার মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমে যায়, তখন স্থানীয় ডিলার ও ব্যবসায়ীরাও দাম কমানোর জন্য চাপ অনুভব করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে মার্কিন ডলারের মান, ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ মজুতের নীতির পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে কিছুটা অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম স্থিতিশীল না থাকায় দেশের বাজারেও ঘন ঘন স্বর্ণের দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই মূল্য হ্রাস ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি বয়ে আনবে।

পূর্ববর্তী দাম সমন্বয় এবং চলতি বছরের পরিসংখ্যান

এর আগে সবশেষ গত ১৫ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সেদিন ভরিতে এক ধাক্কায় ৫ হাজার ৪৪৭ টাকা কমানো হয়েছিল। যার ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ৮ হাজার ২৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল ১৬ নভেম্বর থেকে।

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম মোট ৭৮ বার সমন্বয় করা হলো। এই ৭৮ বারের মধ্যে দাম বাড়ানো হয়েছে ৫৩ বার, যা দাম কমানোর সংখ্যা (২৫ বার) থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। এই পরিসংখ্যানটি দেশের স্বর্ণের বাজারের অস্থিরতা ও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে তুলে ধরে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালেও স্বর্ণের দাম মোট ৬২ বার সমন্বয় করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল এবং ২৭ বার কমানো হয়েছিল। এই প্রবণতা বাজারের দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দেয়।

রুপার দামের অবস্থা ও নতুন দর

স্বর্ণের দাম কমানো হলেও দেশের বাজারে রুপার দামে কোনো পরিবর্তন আনেনি বাজুস। রুপার পূর্বের দামই বহাল রাখা হয়েছে।

রুপার বর্তমান দামের তালিকা:

  • ২২ ক্যারেট: প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২৪৬ টাকায়।
  • ২১ ক্যারেট: প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪৭ টাকায়।
  • ১৮ ক্যারেট: প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪৭৬ টাকায়।
  • সনাতন পদ্ধতি: প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০১ টাকায়।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত রুপার দাম মোট ৯ বার সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ বার দাম বেড়েছে এবং ৩ বার কমেছে। ফলে স্বর্ণের তুলনায় রুপার বাজারে অস্থিরতা কিছুটা কম।

ক্রেতাদের ওপর প্রভাব: বিয়ে এবং বিনিয়োগের মৌসুম

স্বর্ণের দাম কমার সিদ্ধান্ত ক্রেতা এবং বিনিয়োগকারী উভয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে শীতকালে বাংলাদেশে বিয়ের মৌসুম শুরু হয়, যেখানে স্বর্ণালঙ্কারের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। পরপর দুই দফা দাম কমার কারণে ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন এবং বাজারে চাহিদা বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্বর্ণের দামের এই ঘন ঘন পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের দ্বিধায় ফেলতে পারে। স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হলেও এর ঘন ঘন মূল্য সমন্বয় বাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, দাম কমলেও তা সাময়িক, এবং ভবিষ্যতে আবার দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জুয়েলারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও মজুরি সংক্রান্ত নির্দেশনা

বাজুস তাদের বিজ্ঞপ্তিতে গ্রাহকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। স্বর্ণের গহনা কেনার সময় বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে ক্রেতাকে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও, বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি (৬ শতাংশ) যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন, মান এবং কারিগরির ভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে। এই নিয়মগুলি স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং গ্রাহকের অধিকার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক স্বর্ণের দাম কমানোর সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি দেশের স্বর্ণের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার প্রভাবে ভরিতে ১ হাজার ৩৬৪ টাকা হ্রাস পাওয়ায় ক্রেতারা কিছুটা সুফল পাবেন। তবে চলতি বছর দাম সমন্বয়ের এই রেকর্ড সংখ্যাটি বাজারের অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়। নতুন দর কার্যকর হওয়ার ফলে আসন্ন বিয়ের মৌসুমে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা বাড়বে বলে আশা করা যায়।

এম আর এম – ২২৯১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button