রাজধানীর বসুন্ধরায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের অর্থনীতি, আর্থিক খাতের সংস্কার, করব্যবস্থা ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকাস্থ আঞ্চলিক অফিসের প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত আমীরের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো, আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং আনুষ্ঠানিক পরিবেশে সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠকের মূল বিবরণ
বৈঠকে নেতৃত্ব দেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকাস্থ আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক জঁ ডেনিস পেসম। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা ডিভিশনের অর্থ উপদেষ্টা মেহরিন এ. মাহবুব এবং অপারেশন ম্যানেজার এমএস গায়েল মার্টিন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক খাতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী ছিলেন।
অন্যদিকে, জামায়াত আমীরের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মিজানুর রহমান, সাবেক সিনিয়র সচিব মুহাম্মাদ সফিউল্লাহ এবং জামায়াতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান। উভয় পক্ষই বিস্তারিত আলোচনায় অংশ নেন এবং নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
বৈঠকে আলোচিত বিষয়সমূহ
প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চান। আলোচনায় উঠে আসে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, ঋণনীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং টেকসই অর্থনীতি নিয়ে নানা প্রস্তাবনা।
বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কাঠামোগত পরিবর্তন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (এসএমই) উন্নয়ন, ডলার সংকট এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়।
জামায়াত আমীরের দলীয় প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, জনগণের জীবনমান এবং নীতি নির্ধারণের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পূর্বাপর প্রেক্ষাপট
বিশ্ব ব্যাংক নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসে থাকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গবেষক এবং অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় তাদের একটি চলমান কার্যক্রমের অংশ। এ ধরনের বৈঠকের মাধ্যমে তারা দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার সার্বিক বিশ্লেষণ করে থাকে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের বৈঠক সাধারণত নীতিগত বিষয়, অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা এবং উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। আগেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক হয়েছে, যা নীতি-আলোচনায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
বৈঠকের সম্ভাব্য প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে চাপের মধ্যে আছে, সেখানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের এই ধরনের বৈঠক স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। তবে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে বিতর্কও সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈঠকের গুরুত্ব
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জে পূর্ণ। মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে অনিয়ম এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা নিয়ে জনমতও ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। এসব পরিস্থিতিতে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে এই বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরা সাধারণত দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতি বাস্তবায়ন এবং করব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে সুপারিশ দিয়ে থাকে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি দলও এসব বিষয়ে মতামত তুলে ধরেছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মন্তব্য
অর্থনীতিবিদদের মতে, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, তখন তারা দেশের সামগ্রিক গণতান্ত্রিক কাঠামো, নীতি-প্রক্রিয়া এবং জনস্বার্থ সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা লাভ করে। এর ফলে নীতিনির্ধারণ আরও বাস্তবসম্মত হয়।
তারা আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের উন্নয়ন-দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সামনে তুলে ধরতে পারে। এতে ভবিষ্যতে উন্নয়ন তহবিল, প্রকল্প অনুমোদন বা পরামর্শমূলক সহযোগিতা পেতে সুবিধা হয়।
জামায়াত আমীরের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংক প্রতিনিধি দলের এই বৈঠক বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আলোচনায় টেকসই অর্থনীতি, কর ব্যবস্থা, সামাজিক উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করার মতো জরুরি বিষয় উঠে এসেছে। ভবিষ্যতে এই আলোচনা দেশের উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনায় নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে কিনা, তা এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ২২৮৭,Signalbd.com



