বিশ্ব

জাতিসংঘের গাজা প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের অধিকার পূরণে ব্যর্থ — হামাস

Advertisement

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনা, যা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনার অংশ, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। তবে, ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাস বলেছে, এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের মৌলিক দাবি ও অধিকারকে পুরোপুরি বিবেচনা করেনি এবং গাজায় নতুন একটি “আন্তর্জাতিক দখলদারিত্ব” তৈরি করার চেষ্টা করছে।

পরিকল্পনার মূল উপাদানসমূহ

  • নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক Stabilization Force (ISF) গঠন করার অনুমোদন দিয়েছে।
  • ISF-এর ম্যান্ডেট দুই বছরের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটি গাজায় সীমান্ত নিরাপত্তা, অস্ত্র নিষ্ক্রিয়তা এবং মানবিক সহায়তা রক্ষা করবে।
  • গাজার প্রশাসনিক কাঠামোর জন্য একটি “Board of Peace” গঠন করার প্রস্তাব রয়েছে।
  • বোর্ড অফ পিসকে ট্রানজিশনাল প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
  • দীর্ঘমেয়াদে গাজার ভবিষ্যত রাজনৈতিক কাঠামো হিসেবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করার পথ রয়েছে।

হামাসের প্রতিক্রিয়া

হামাস তাদের এক বিবৃতিতে জোরালোভাবে বলেছে যে তারা এই পরিকল্পনাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছে। তাদের মতে, প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক ও মানবিক দাবিগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন করছে না।

  1. অধিকার ন্যায্য মূল্যায়ন নেই
    হামাস বলেছে, এই প্রস্তাব তাদের মৌলিক দাবিগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
  2. আন্তর্জাতিক দখলদারিত্বের আশঙ্কা
    হামাসের মতে, গাজায় “আন্তর্জাতিক বাহিনী” মোতায়েন করলে এটি নিরপেক্ষতা হারিয়ে দখলকারী পক্ষ হিসেবে কাজ করতে পারে।
  3. সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীর অস্ত্র নিষ্ক্রিয়তা
    প্রস্তাবে “প্রতিরোধ গোষ্ঠীর অস্ত্র নিষ্ক্রিয়তা” করার কথা বলা হয়েছে। হামাস বলেছে, এতে তাদের নিরস্ত্র করা হবে এবং বাহিনীকে নিরপেক্ষতার বাইরে নিয়ে যাবে।
  4. গাজার শাসনের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসনের সীমাবদ্ধতা
    হামাসের মতে, বোর্ড অফ পিস তাদের রাজনৈতিক শক্তিকে সীমাবদ্ধ করবে এবং গাজার স্বশাসনকে হ্রাস করবে।

নিরাপত্তা পরিষদের ভোট ও প্রতিক্রিয়া

  • নিরাপত্তা পরিষদে ভোটে ১৩ জন সদস্য সমর্থন জানায়, আর দুটি দেশ গোপনভোট (abstain) করে।
  • সমর্থক দেশগুলোর মধ্যে কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশও রয়েছে।
  • মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, গাজা “দুর্দশাগ্রস্ত” এবং আন্তর্জাতিক বাহিনী শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।
  • সমালোচনার মধ্যে রয়েছে বোর্ড অফ পিস ও প্রশাসনিক কাঠামোর স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়ে।

প্রস্তাবিত প্রশাসনিক কাঠামো

  • ISF (International Stabilization Force) হবে একটি বহুজাতিক শান্তি বাহিনী, যা গাজায় নিরাপত্তা বজায় রাখবে, সীমান্ত রক্ষা করবে এবং মানবিক সহায়তা সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
  • ISF-এর মাধ্যমে গাজায় অস্ত্র নিষ্ক্রিয়তা নিশ্চিত করা হবে, বিশেষ করে অস্থিতিশীল সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য।
  • বোর্ড অফ পিস (Board of Peace) একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনিক বোর্ড হিসেবে কাজ করবে।
  • বোর্ড গাজার পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা সমন্বয় এবং প্রশাসন পরিচালনা করবে।
  • দীর্ঘমেয়াদে গাজার প্রশাসনিক ক্ষমতা ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনি প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর করা হবে।

হামাসের দাবি ও প্রেক্ষাপট

  • হামাসের নেতা মনে করেন, গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী আসলে একটি দখলকারী শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
  • হামাসের মতে, গাজার শাসন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ও সরকারে থাকা উচিত, বাইরের বাহিনী দ্বারা তাদের ক্ষমতা সীমিত করা ঠিক নয়।

প্রস্তাবের পটভূমি

  • এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০-দফা গাজা পরিকল্পনার অংশ।
  • প্রধান উদ্দেশ্য হলো গাজার দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা পুনর্গঠন করা এবং ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা।
  • প্রস্তাবে মানবিক চাহিদা পূরণ, অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং প্রশাসনিক রূপান্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য প্রভাব

  1. হিংসা ও দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা
    হামাসের স্পষ্ট প্রতিবাদ প্রমাণ করে যে আন্তর্জাতিক বাহিনীকে নিরপেক্ষ শান্তি বাহিনী হিসেবে দেখা কঠিন হতে পারে। অস্ত্র গ্রহণ না করলে শান্তি প্রক্রিয়া ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
  2. সতর্কতা ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
    কিছু দেশ সৈনিক পাঠাতে আগ্রহী, তবে অংশগ্রহণ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করবে।
    বোর্ড অফ পিসের নেতৃত্বে বিদেশী রাষ্ট্রপতি থাকলে গাজার স্বায়ত্তশাসন কতটা কার্যকর হবে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
  3. প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামো
    বোর্ড অফ পিস গঠনের ফলে গাজার প্রশাসনিক কাঠামোতে নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। যদি সফল হয়, এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসন ব্যবস্থা তৈরি করবে এবং পরে গাজাকে ফিলিস্তিনি শাসনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে।
  4. মানবিক, অর্থনৈতিক ও পুনর্গঠন চ্যালেঞ্জ
    গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক পুনরুদ্ধার সহজ নয়। নিরাপদ সহায়তা প্রবাহ, অবকাঠামোর পুনর্গঠন এবং সাধারণ জনগণের জীবনে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনা কঠিন। তবে বোর্ড অফ পিস ও ISF সঠিকভাবে কাজ করলে এটি একটি নতুন শুরু হতে পারে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই অনুমোদন গাজার ভবিষ্যত প্রশাসন ও নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে হামাসের প্রত্যাখ্যান এবং তাদের অস্ত্র রাখার ইচ্ছা প্রমাণ করে যে শান্তি প্রক্রিয়া সহজ হবে না।

গাজার পুনর্গঠন, রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করার পথে প্রস্তাবিত কাঠামো সম্ভাবনাময়, কিন্তু বিপদ ও চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এবং স্থানীয় জনগণের জন্য সামনে কঠিন কাজ রয়েছে — স্থায়ী শান্তি ও মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য আলোচনায় বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং কার্যকর কাঠামো তৈরি করা।

MAH – 13867 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button