আঞ্চলিক

ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু

Advertisement

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মৃত্যুদের মধ্যে দুইজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং একজন ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন। একদিনে নতুন রোগীও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ আপডেট

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ হাজার ৭ জন নতুন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ৩৩৩ জন রোগী, আর বাকি রোগীরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে ঢাকা বিভাগে ২৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া বরিশালে ১৫০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৫ জন, ময়মনসিংহে ৬১ জন, রাজশাহীতে ৪১ জন, খুলনা বিভাগে ২৫ জন, রংপুরে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

এ নিয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ৬১ জন এবং চলতি বছর ৩৩৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

কেন বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ নতুন নয়। ২০০০ সালে প্রথম বড় মাত্রায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি ধরা পড়লেও, পরবর্তী দুই দশকে বর্ষা মৌসুম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বসতি এলাকা, নির্মাণাধীন ভবন, অপরিচ্ছন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং আবাসিক এলাকাগুলোতে এডিস মশার প্রজনন এখনো রোধ করা যাচ্ছে না।

২০২৩ সালে বাংলাদেশ ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু সংকট দেখেছিল। সে বছর তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং ১ হাজার ৭০৫ জন মৃত্যুবরণ করেন, যা দেশের জন্য মারাত্মক সতর্ক সংকেত হয়ে দাঁড়ায়। এবারও পরিস্থিতি সেই দিকেই এগোচ্ছে কিনা তা নিয়ে জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

হাসপাতালের চাপ ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগ

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ায় রাজধানীসহ দেশের হাসপাতালগুলোতে চাপ আবারও বেড়েছে। অনেক হাসপাতালে উচ্চসংখ্যক রোগী ভর্তি হওয়ায় বেড সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বেশি, কারণ সাধারণ মানুষ চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে ঝুঁকছে।

চিকিৎসকদের মতে, রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার প্রজনন মৌসুমে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ: এ বছরের ডেঙ্গু চিত্র

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৮৬ হাজার ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা মোট মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকের সমান।

গত মাসে ডেঙ্গুতে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা চলতি বছরের মধ্যে এক মাসে সর্বোচ্চ। একই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২২ হাজারের বেশি মানুষ। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা বেশি না হলেও মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি, যা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ: কী বলা হচ্ছে

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাঠ পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণে কিছু অদক্ষতা এখনো রয়েছে। এছাড়া নাগরিক সচেতনতার ঘাটতিও একটি বড় কারণ। পানি জমে থাকা স্থানে মশার ডিম ফোটার প্রবণতা বেশি হওয়ায় বাড়ি-অফিসের আশপাশ পরিষ্কার রাখা জরুরি।

একজন জনস্বাস্থ্য গবেষক বলেন, ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগে পরিণত হয়েছে। আগের মতো শুধু বর্ষা মৌসুমে নয়, এখন প্রায় প্রতিটি মাসেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।

ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা কমলেও মৃত্যুর হার বাড়ছে, যা বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনগুলো মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাগরিক সচেতনতা এবং সরকারি আধুনিক ও কার্যকর উদ্যোগ একসঙ্গে না হলে এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।

আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে রোগীর সংখ্যা কমতে পারে, তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্ভর করবে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কতটা সফল হয় তার ওপর।

এম আর এম – ২২৭৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button