বাংলাদেশ

হাসিনার ফাঁসির রায়ে নিশ্চুপ মোদি, প্রতিবাদ জানায়নি ভারত

Advertisement

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর প্রতিবেশী দেশ ভারতের নীরব অবস্থান আলোচনা সৃষ্টি করেছে। তবে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ভারত জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

বাংলাদেশে জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশেষত আলোচনার কেন্দ্রে, কারণ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখনো এ রায় নিয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি। একইসঙ্গে ভারত সরকারও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ কিংবা সমর্থন—কোনোটিই জানায়নি, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিবেশে ভারতের বর্তমান অবস্থান কী।

ঘোষিত রায়ের বিস্তারিত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত সোমবার ঘোষিত রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল গণঅভ্যুত্থানের সময় ব্যাপক দমন-পীড়ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের ওপর হামলার নির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ।

একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলার কার্যক্রম শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত ছিল, কারণ এতে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে।

রায় ঘোষণার পর দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া আসে। এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে দাবি করেছে সরকারের বিভিন্ন অংশ, আর কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন আদালতের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার প্রশ্নও তোলে।

ভারতের নীরবতা এবং প্রথম প্রতিক্রিয়া

রায় ঘোষণার পর ভারত থেকে তৎক্ষণাৎ কোনো কঠোর বা স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া না আসায় তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষত কারণ, শেখ হাসিনা এখনো ভারতে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে, তারা রায় সম্পর্কে অবগত এবং প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তারা এ রায়ের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করেনি, এবং প্রতিবাদও জানায়নি।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট ও সাম্প্রতিক বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার রায় নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য প্রকাশ করেননি তিনি। বরং অন্য আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিয়মিত মন্তব্য করলেও এই ইস্যুতে নীরবতা বজায় রেখেছেন।

এই অবস্থান বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতের দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে একটি নতুন ধরনের সতর্ক কৌশলের ইঙ্গিত বহন করছে।

কেন ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনার আমলে এই সম্পর্ক বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ ছিল। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তি, সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা, এবং বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় ভারত নীরব ভূমিকা পালন করেছিল, যা তখনও আলোচনায় আসে। আর রায় ঘোষণার পর ভারত যে আবারও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, তা বিশ্লেষকদের মতে দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা নির্দেশ করছে।

অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করছে, শেখ হাসিনা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিত্র ছিলেন। তাই তার বিরুদ্ধে রায়ের পর ভারতের নীরবতা বিভিন্ন কূটনৈতিক হিসাব–নিকাশের অংশ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

রায়ের খবর বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক গুরুত্ব পায়। বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো মানবাধিকার ইস্যু, দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা এবং দুই প্রতিবেশীর রাজনৈতিক সম্পর্ক—সবই উল্লেখ করে বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছে।

ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোও খবরটি ‘ব্রেকিং’ হিসেবে প্রচার করে। বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত কোন অবস্থান নেবে তা এখনো স্পষ্ট না হলেও নীরবতা একটি আলাদা কূটনৈতিক সংকেত। তারা বলছেন, ভারত হয়তো পরিস্থিতি আরও পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা এড়িয়ে যাচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক রায় নিয়ে ভারত সরাসরি মন্তব্য করলে তা আন্তঃরাষ্ট্রীয় টানাপড়েন তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে রায়ের বিরোধিতা করলে তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার মনে করছেন, রায়কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ কোন দিকে যাবে, সেটাও ভারতের নীরবতার একটি কারণ হতে পারে। পরিস্থিতি যতই উত্তপ্ত হবে, ভারতের কৌশলও ততই স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশের আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের নীরবতা নতুন প্রশ্ন তোলে—দুই দেশের রাজনৈতিক বন্ধুত্ব কি নতুনভাবে পুনর্গঠনের পথে যাচ্ছে, নাকি ভারত কৌশলগতভাবে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করছে?

আগামী দিনগুলোতে ভারতের আনুষ্ঠানিক অবস্থান স্পষ্ট হলে আঞ্চলিক কূটনীতির দিক–পরিক্রমাও পরিষ্কার হবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই এ বিশাল কূটনৈতিক হিসাব–নিকাশের মূল নির্ধারক হতে পারে।

এম আর এম – ২২৭২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button