আগামী নির্বাচনে শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এবারের নির্বাচন সাধারণ কোনো নির্বাচন নয়; এটি দেশ রক্ষার নির্বাচন, যা জাতির ভবিষ্য্য নির্ধারণ করবে।
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সদ্য পদায়নকৃত ৫০ জেলা প্রশাসকসহ ৬৪ জেলার প্রশাসকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন কেবলমাত্র পাঁচ বছরের সরকারের জন্য নয়, বরং গণভোটসহ হওয়ায় এটি অতীব তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন।
ড. ইউনূস বলেন, “এটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নির্বাচন। আমরা যে জাতি বহু প্রহসনের নির্বাচন দেখেছি, তার স্মৃতি অতিক্রম করতে আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন
প্রধান উপদেষ্টা জানান, এবারের নির্বাচন গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নির্বাচন, যা গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণতা দেবে। তিনি বলেন, “এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতির শতাব্দীর গতিপথ নির্ধারিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে এবং জেলা প্রশাসকরা থাকবেন এই নবজন্মের ধাত্রীর ভূমিকায়।”
জেলা প্রশাসকদের জন্য নির্দেশনা
ড. ইউনূস জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেন:
- নির্বাচনের প্রস্তুতি পূর্ণতা সহকারে নিতে হবে, সব তথ্য ও নিয়মাবলী জানা থাকা জরুরি।
- নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে।
- বিপুল সংখ্যক তরুণ ও নারী ভোটার উপস্থিত থাকবেন, যারা ভোট দিতে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সুযোগ পাননি।
- আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রতি গভীর উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তাদের দৃষ্টি থাকবে দেশের নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু পরিচালনার দিকে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “এই নির্বাচনকে স্বার্থক করা মানে গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। এটি একটি বিরাট অভিযান, যা আমাদের জিততেই হবে। স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে এই লড়াই জিততে হবে।”
নির্বাচনকে বিশেষ করে তোলে কি?
ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই নির্বাচন সাধারণ নির্বাচন নয়, এটি জাতির ভবিষ্য্য নির্ধারণের সংকটময় মুহূর্ত। নির্বাচনের সাথে যুক্ত রয়েছে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্থিতিশীলতা।
বিশেষ করে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী তরুণ এবং নারী ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যেসব ভোটার গত ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারেননি, তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এটি হবে সত্যিকারের গণতন্ত্রের পরীক্ষা।”
আন্তর্জাতিক নজরদারি
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইতিমধ্যে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, তারা লক্ষ্য রাখবেন কিভাবে নির্বাচন পরিচালিত হচ্ছে। “এটি আমাদের জন্য গৌরবের মুহূর্ত, দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাচ্ছে কিনা তা প্রমাণ করার সুযোগ।”
শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি
জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেন, “নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। কোনো ধরনের অশান্তি বা সহিংসতা সহ্য করা হবে না। প্রতিটি ভোটার যেন নিরাপদভাবে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।”
জেলার প্রশাসকের ভূমিকা
ড. ইউনূস বলেন, “জেলা প্রশাসকরা থাকবেন নির্বাচনের মূল স্থপতি। তাদের দায়িত্ব হলো ভোটারদের অধিকার রক্ষা করা, ভোট গ্রহণ কার্যক্রমে সহায়তা করা এবং সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।” তিনি আরও বলেন, “এই নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কারণ এটি শুধুমাত্র নির্বাচন নয়, এটি জাতির ভবিষ্য্য গঠনের অভিযান।”
নির্বাচনের প্রভাব
এবারের নির্বাচনের প্রভাব কেবল সরকারের গঠন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে, যা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে পুনর্গঠন করবে। ড. ইউনূস বলেন, “নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে কতটা শক্তিশালীভাবে টিকে থাকতে পারি।”
ভোটারদের সচেতনতা
প্রধান উপদেষ্টা ভোটারদের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল অংশগ্রহণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক ভোটার যেন নিজের ভোটের গুরুত্ব বুঝতে পারে, এবং নিরপেক্ষভাবে ভোট প্রদান করে দেশের উন্নয়নে অংশ নেয়।”
শিক্ষা ও প্রযুক্তি ব্যবহার
ড. ইউনূসের বক্তব্যে উঠে আসে শিক্ষা ও প্রযুক্তির ব্যবহারও। তিনি বলেন, “নির্বাচনের সুষ্ঠু ও দ্রুত প্রক্রিয়ার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভোটার তথ্য, ভোট গণনা এবং ফলাফল প্রকাশে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে।”
আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা
“আমরা চাই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নিশ্চিত হোক, আমাদের নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানের। এটি শুধুমাত্র দেশের জন্য নয়, বরং গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের দায়িত্ব।” তিনি আরও বলেন, “জাতির ভবিষ্য্য নির্ধারণের এই মুহূর্তে আমরা সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার স্লোগান
ড. ইউনূস শেষ করেন শক্তিশালী স্লোগান দিয়ে:
“এই নির্বাচন আমাদের দেশের জন্য, আমাদের জাতির জন্য, এবং আমাদের ভবিষ্য্যের জন্য। এটি আমাদের জয় হতে হবে।”
MAH – 13848 I Signalbd.com



