ফেনীর সোনাগাজীতে এক নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যা পুরো এলাকায় শোক ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রোববার রাত ৯টার দিকে চরদরবেশ ইউনিয়নের পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামে অটোরিকশা চালক মনোরঞ্জন ভূঞা (৬৫) কে দুর্বৃত্তরা গলা কেটে হত্যা করেছে। নিহত মনোরঞ্জন দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোরঞ্জন চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ভূঞা বাজার-সংলগ্ন কলাবাগান এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। হত্যাকাণ্ডের রাতের ঘটনা অনুসারে, কিছু যুবক সোনাগাজী পৌর শহর থেকে ছোট ফেনী নদীর সাহেবের ঘাট সেতু পর্যন্ত যেতে অটোরিকশা ভাড়া করেন। অটোরিকশা চালক মনোরঞ্জন তাদের রিকশায় তুললে, দুর্বৃত্তরা সাহেবের ঘাট সেতু পার হতেই অটোরিকশা থামিয়ে চালককে মারধর করে এবং গাড়িটি ছিনতাই করার চেষ্টা করে।
তবে মনোরঞ্জন তাদের বাধা দিলে, দুর্বৃত্তরা চরম নৃশংসতা দেখিয়ে মনোরঞ্জনের গলা কেটে হত্যা করে। এরপর তাঁকে এবং অটোরিকশাটি খালের পাশে ফেলে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের শোক ও অভিযোগ
ঘটনার পর স্থানীয়রা রক্তাক্ত মরদেহ খালের পাশে পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত পুলিশে খবর দেন। মৃতের প্রতিবেশী মহিন উদ্দিন জানান, মনোরঞ্জন নতুন অটোরিকশা কিনে কয়েকদিন আগে কিস্তিতে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন অটোরিকশাটি ছিনতাই করতে ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
মহল্লার বাসিন্দারা জানান, মনোরঞ্জন ছিলেন দায়িত্বশীল, শান্ত ও পরিশ্রমী মানুষ। এলাকায় তাঁর সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে রিকশা চালিয়ে তিনি পরিবার ভরণপোষণ করতেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর এলাকার মানুষ আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
পুলিশের তৎপরতা ও তদন্ত
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, মরদেহটি খালের মধ্যে পাওয়ায় দুই থানার পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। তিনি জানান, “হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে। এই ঘটনায় অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিহত মনোরঞ্জনের মরদেহ ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হত্যার প্রকৃত কারণ ও সময় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
হত্যাকাণ্ডের পেছনের সম্ভাব্য কারণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি অর্থ ও সম্পদ সম্পর্কিত অপরাধ হতে পারে। মনোরঞ্জন কয়েকদিন আগে নতুন অটোরিকশা কিনেছিলেন। স্থানীয়রা বলেন, নতুন অটোরিকশা কেনার কারণে দুর্বৃত্তরা মনোরঞ্জনকে টার্গেট করে থাকতে পারে।
এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে নিত্যনতুন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যাত্রীবেশে ছিনতাই বা চাঁদাবাজির ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। যদিও পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও অপরাধীরা সাধারণত দ্রুত পালিয়ে যায়।
সামাজিক প্রভাব ও নিরাপত্তার প্রশ্ন
এই হত্যাকাণ্ডের পরে স্থানীয় মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁরা পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পেট্রোলিং বাড়ানোর দাবি করেছেন। ফেনী ও আশপাশের এলাকা থেকে অনেক মানুষ Signalbd-কে জানিয়েছেন, তারা এখন রাতে একা বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসনকে রাত্রী পেট্রোলিং এবং CCTV স্থাপন বাড়াতে হবে। এছাড়া অটোরিকশা চালকদের জন্য সচেতনতা ও নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ প্রদানও জরুরি।
সাম্প্রতিক অতীতের প্রেক্ষাপট
ফেনী জেলায় এই ধরনের হত্যাকাণ্ড নতুন নয়। গত বছরও একই ধরনের ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অটোরিকশা চালক বা ছোট ব্যবসায়ীকে টার্গেট করা হয়েছিল। এ ধরনের অপরাধে পুলিশ অভিযান ও গ্রেফতারের হার কম থাকায় অপরাধীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটি একটি সিস্টেম্যাটিক সমস্যা। সম্পদসম্পন্ন মানুষ বা নতুন ব্যবসায়ী টার্গেট হচ্ছে। প্রশাসনের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ।”
সমাধানের সম্ভাবনা
নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:
- নতুন অটোরিকশা বা যানবাহনের নিবন্ধন ও তথ্য পুলিশকে জানানো।
- সরাসরি মানচিত্র ও রুট প্ল্যান চালকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা।
- নিরাপদ রুটে CCTV ও লাইটিং বৃদ্ধি।
- স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশিং প্রোগ্রাম চালু করা।
- যাত্রী ও চালক উভয়ের জন্য পরিচয় যাচাই ও নিরাপত্তা সচেতনতা।
যদিও এই হত্যাকাণ্ডে অপরাধীরা দ্রুত পালিয়েছে, পুলিশের যৌথ অভিযান এবং স্থানীয় সচেতনতা যদি বাড়ানো হয়, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড স্থানীয় মানুষের জন্য কেবল শোক নয়, বরং নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধির জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। Signalbd.com-এ আমরা এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত, তদন্ত ও প্রতিক্রিয়ার সব তথ্য সরবরাহ করব।
MAH – 13843 I Signalbd.com



