আঞ্চলিক

অসহায় নারীর ব্যাংক ঋণ শোধ করলো জামায়াত

Advertisement

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেলেন হাসিনা বেগম নামে এক অসহায় নারী। তার ৮০ হাজার ৫৩৩ টাকার ঋণ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পরিশোধ করেছে।

ঋণ পরিশোধের ঘটনা

রোববার (১৬ নভেম্বর) ব্যাংকের তিরনইহাট শাখায় উপস্থিত হয়ে পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ইকবাল হোসাইন হাসিনা বেগমের ঋণ পরিশোধ করেন। উপস্থিত ব্যাংক কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

হাসিনা বেগমের বাড়ি তিরনইহাট ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামে। তার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন, তাই সংসারের সমস্ত দায়িত্ব কেবল তার উপরই।

ঋণের পটভূমি

হাসিনা বেগম ২০২২ সালে মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যাংক থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। স্বামীর অক্ষমতার কারণে তিনি নিজে সংসার চালাতে গিয়ে কষ্টে ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

এরপর, ২৫ মার্চ তার অজান্তে ব্যাংকে ঋণ নবায়ন করা হয় এবং চক্রবৃদ্ধি সুদে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার ৫৩৩ টাকায়। সাধারণ মানুষ হিসেবে হাসিনার পক্ষে ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না।

জামায়াতের মানবিক উদ্যোগ

হাসিনার এই দুরবস্থা জানতে পেরে জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ইকবাল হোসাইন ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সামর্থ্য অনুযায়ী ভবিষ্যতেও তারা এমন মানবিক কাজে অবদান রাখতে প্রস্তুত।

হাসিনা বেগমের প্রতিক্রিয়া

ঋণমুক্ত হওয়ায় হাসিনা বেগম বলেন, “আমার স্বামী মানসিক ভারসাম্যহীন। নিজ উপার্জনে সংসার চালাই। বিপদে পড়েছি, ঋণ নিয়েছি, কিন্তু পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। জামায়াতের সহায়তায় আমি ঋণমুক্ত হয়েছি, এজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।”

তিনি আরও বলেন, এই সহায়তা তার জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে এবং ভবিষ্যতে পরিবারের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে সহায়তা করবে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানান, এই ধরনের উদ্যোগ মানুষের মধ্যে সামাজিক সহানুভূতি বৃদ্ধি করে। তারা আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতেও দরিদ্র ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বলেন, সমাজে মানবিক কাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তারা আশা করছেন, এই ধরণের উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পূর্বেও বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র ও অসহায়দের ঋণমুক্ত করার জন্য সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, এই ধরনের ঋণ পরিশোধ কার্যক্রম মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিচ্ছে এবং জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে সহায়তা করছে।

বিশেষ করে, মানসিকভাবে অসহায় পরিবারের নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা।

মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মানবিক উদ্যোগ দরিদ্রদের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। তারা আরও বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে সহানুভূতি ও মানবিকতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মাওলানা ইকবাল হোসাইন বলেন, “আমরা চাই সমাজের কোনো মানুষ অবহেলা বা অনটনে কষ্ট না পায়। সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা মানবিক কাজে পাশে থাকব।”

হাসিনা বেগমের ঋণমুক্তির ঘটনা প্রমাণ করে যে সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানরা দরিদ্র ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম। জেলা জামায়াতের এই মানবিক উদ্যোগ দরিদ্রদের জীবনে আশার আলো জ্বালিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন উদ্যোগ সমাজে মানবিক মূল্যবোধকে দৃঢ় করবে এবং দরিদ্রদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

এম আর এম – ২২৭১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button