বিশ্ব

‘ট্রাম্প একজন উন্মাদ’: যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখলের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে ৭২ বছর বয়সী ফাতি আবু আল-সাঈদ লাঠিতে ভর দিয়ে ধ্বংসস্তূপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতি শুরুর পর তিনি গাজার আল-মাওয়াসি এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে খান ইউনিসে ফিরে এসেছেন। এখন প্রতিদিনের মতো তিনি ধ্বংসস্তূপের ওপর হাঁটছেন।

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবন

সাঈদ ধ্বংসস্তূপের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আপনি কি ওই মূল্যহীন ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাচ্ছেন? ওটা যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির ভেতরে থাকা সবকিছুর চেয়ে বেশি মূল্যবান।” ফিলিস্তিনিদের গণহারে ঘরছাড়া হওয়ার বিষয়টি তার কাছে নতুন নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় তার বাবাকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়েছিল।

ট্রাম্পের মন্তব্য

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি গাজা দখল নিয়ে মন্তব্য করেছেন, যেখানে তিনি ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে গাজায় ‘মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রসৈকত’ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। সাঈদ এই মন্তব্যকে ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলেন, “ট্রাম্প এমনভাবে কথা বলছেন, যেন তিনি জমি বিলানোর একজন রাজা। তাঁর উচিত ইসরায়েলি বন্ধুদের ফিলিস্তিনের বাইরে কোথাও স্থানান্তর করা।”

ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া

সাঈদ বলেন, “গণহত্যার মধ্যেও আমরা চলে যাইনি। এটি আমাদের জন্মভূমি। আমাদের জমি। এখানকার প্রতিটি ইট আমাদের কাছে যত মূল্যবান, তত মূল্যবান কিছুই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দিতে পারবে না।” তিনি ট্রাম্পের মন্তব্যকে পাগলাটে বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “এটি যেকোনো বিশ্বনেতার করা সবচেয়ে সেরা কল্পনা।”

যুদ্ধের প্রভাব

গাজার ২৩ লাখ মানুষের ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির পর অনেকে নিজেদের এলাকায় ফিরে এসেছেন, কিন্তু তাদের বাড়ি অক্ষত নেই। তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছেন। সাঈদ বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই জানি, সব হারানোর মানে কী। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে আঁকড়ে রাখার অর্থ কী।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ফিলিস্তিনিদের ‘স্থায়ীভাবে’ পুনর্বাসিত করা হবে। তিনি গাজা পুনর্নির্মাণের সময় সেখানকার বাসিন্দাদের অন্য কোথাও থাকতে হবে বলেও উল্লেখ করেন।

শিশুদের ভবিষ্যৎ

যুদ্ধের ফলে গাজার শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। ১৭ হাজার ৪০০–এর বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। সাঈদ বলেন, “এটা কেমন যুক্তি? তারা আমাদের অনাহারে রাখে, বোমা মারে। আর আমরা যখন দেশ ছেড়ে চলে যেতে অস্বীকার করি, তখন এমন আচরণ করে, যেন অবাক হয়েছে।”

সাঈদের দৃঢ়তা

সাঈদ বলেন, “আপনি কি জানেন, কোন ঘটনা কখনোই ঘটবে না। তা হলো, আমরা ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামকে বোঝেন না। “ইসরায়েল মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা এখানে আছি, এখানেই থাকব,” বলেন তিনি।

ফাতি আবু আল-সাঈদের মতো ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্মভূমি রক্ষার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের মন্তব্য এবং ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে তাদের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে। তারা জানেন, তাদের ভূমি রক্ষা করা মানে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করা।

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button