যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান চুক্তিতে ইসরায়েলের শর্ত অনুযায়ী সৌদি আরবকে প্রথমে তেল আবিবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হবে। এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
সৌদি আরবের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৮টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার সম্ভাবনা আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও, ইসরায়েল এই বিক্রির শর্ত হিসেবে রিয়াদকে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে অগ্রগতি দেখাতে বলেছে। শর্ত পূরণ না হলে অস্ত্র চুক্তি কার্যকর হবে না।
ঘটনার বিস্তারিত
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আলোচনার প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানের সম্ভাব্য ক্রয়, যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি নিরাপত্তা চুক্তি, এবং সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবকে এফ–৩৫ সরবরাহ করার কোনো মৌলিক আপত্তি নেই। তবে তারা চাইছে, এই সরবরাহ কেবল তখনই কার্যকর হোক, যখন সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে। এক কর্মকর্তা জানান, “কোনও কূটনৈতিক লাভ ছাড়া উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করা হবে ‘ভুল ও প্রতিক্রিয়াশীল’ সিদ্ধান্ত।”
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে এফ–৩৫ কেনার আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। ২০১৮ সালে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার পর এটি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। মে মাসে ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্রচুক্তি।
এফ–৩৫ বিশ্বের অন্যতম উন্নত স্টেলথ যুদ্ধবিমান। এর সর্বোচ্চ গতি মাখ ১.৬ (প্রায় ঘণ্টায় ১২০০ মাইল)। তিনটি সংস্করণ রয়েছে—F-35A, F-35B, এবং F-35C। প্রতিটি বিমানের দাম কমপক্ষে ১০১.৫ মিলিয়ন ডলার। সৌদি আরব ৪৮টি এফ–৩৫ কিনতে আগ্রহী, যা কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যয় সাপেক্ষ।
ইসরায়েলের শর্ত
ইসরায়েলের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সৌদি আরবের হাতে এফ–৩৫ গেলে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই তারা চায় যে যেকোনো বিক্রি অবশ্যই সৌদি-ইসরায়েল কূটনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সম্পর্কিত হোক।
এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ট্রাম্প প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছি—সৌদি আরবকে এফ–৩৫ দেওয়ার আগে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের অগ্রগতি থাকা জরুরি।” অন্য কর্মকর্তা যোগ করেন, “কেবল অস্ত্র সরবরাহ করে সৌদিকে শক্তিশালী করা ভুল হবে।”
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক প্রভাব
এফ–৩৫ বিক্রির সম্ভাবনা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি করেছে। সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ এই অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আব্রাহাম চুক্তির অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সৌদি আরবও যদি যুক্ত হয়, তবে এফ–৩৫ সরবরাহে ইসরায়েলের আপত্তি থাকবে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিক্রির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক পরিবর্তিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি নিরাপত্তা চুক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদির নিরাপত্তা চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র আধুনিক অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহ করবে। সম্ভাব্য এফ–৩৫ বিক্রিও এই চুক্তির অংশ। এই ধরনের চুক্তি সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব শক্তিশালী করবে।
মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সৌদি আরবের হাতে এফ–৩৫ গেলে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা স্থিতিশীলতায় প্রভাব পড়বে। তবে ইসরায়েলের শর্তে কূটনৈতিক অগ্রগতি না হলে, অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি জটিল হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আব্রাহাম চুক্তিতে সৌদি অংশগ্রহণ এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ ছাড়া এফ–৩৫ বিক্রি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা সমীকরণে নতুন উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।
সৌদি আরবের জন্য সম্ভাব্য এফ–৩৫ চুক্তি কেবল অস্ত্র কেনার বিষয় নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সমীকরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসরায়েলের শর্ত পূরণ ছাড়া অস্ত্র বিক্রি কার্যকর হবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই শর্ত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভারসাম্য এবং সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কের ভবিষ্যত নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এম আর এম – ২২৬৪,Signalbd.com



