বাংলাদেশ

সংলাপ থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশকে বের করে দিলো ইসি

Advertisement

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে ইসলামী ঐক্যজোটের দুই ভিন্ন অংশের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়। একাংশকে সংলাপ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপের প্রথম পর্বে।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নেওয়ার সময় ইসলামী ঐক্যজোটের দুই ভিন্ন অংশের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজি নেতৃত্বাধীন অংশের আপত্তির কারণে মুফতি আবুল হাসানাত আমিনীর নেতৃত্বাধীন অংশকে সংলাপ থেকে বের করে দেওয়া হয়। কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এই নির্দেশ দেন।

ঘটনার বিস্তারিত

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষে প্রথম পর্বের সংলাপ শুরু হওয়ার ঠিক আগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইসলামী ঐক্যজোটের দুই ভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদল কক্ষে উপস্থিত হন। মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজি নেতৃত্বাধীন দলকে লক্ষ্য করে মুফতি আবুল হাসানাত আমিনীর দল “ফ্যাসিবাদের দোসর” আখ্যায়িত করে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দুই দলের কাছে আমন্ত্রণপত্র দেখানোর জন্য অনুরোধ করা হলে, আমিনীর দল হার্ডকপি দেখাতে পারেনি। এর ফলে সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ তাদের কক্ষে বসার অনুমতি দেননি এবং বের হয়ে যেতে বলেন।

সংলাপের প্রেক্ষাপট

সংলাপের প্রথম পর্বে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এতে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সংলাপের উদ্দেশ্য ছিল আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি, অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করা।

ইসলামী ঐক্যজোটের দুই ভিন্ন অংশের মধ্যে চলমান বিরোধই মূলত এই উত্তেজনার কারণ। আগের নির্বাচনে একাংশের অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বর্তমান সংলাপে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

ইসি কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমন্ত্রণপত্র হার্ডকপি না থাকলে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়।” এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সংলাপে কক্ষের নিয়মিত ও দায়িত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।

সংলাপের সময় এ ধরনের অসামঞ্জস্যতা পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। এর ফলে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয় এবং সংলাপের মূল উদ্দেশ্য বজায় থাকে।

দলের প্রতিক্রিয়া

বের হওয়ার সময় মুফতি আবুল হাসানাত আমিনীর দল অভিযোগ করেন যে নির্বাচন কমিশন একতরফা সিদ্ধান্তে তাদের বের করে দিয়েছে, যদিও তাদের নিবন্ধন কমিশনের কাছে রয়েছে। মাওলানা আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, “নির্বাচন কমিশন আমাদের ওপর অন্যায় করেছে। আমাদেরও সংলাপে অংশগ্রহণের অধিকার আছে।”

অন্যদিকে, সাখাওয়াত হোসেন রাজি বলেন, “যে অংশগুলো পূর্বে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল, তাদের উপস্থিতি আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের প্রতিনিধি দল থাকলে অন্য দলের উপস্থিতি সমানভাবে মানা যায় না।”

ইসলামী ঐক্যজোট দীর্ঘদিন ধরে ভিন্ন ভিন্ন ফ্র‍্যাকশনে বিভক্ত। পূর্ববর্তী নির্বাচনে একাংশের অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে দলটির ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়। কমিশনের নিয়মিত নীতিমালা অনুসারে আমন্ত্রণপত্রের হার্ডকপি থাকা প্রয়োজন। এ নিয়ম না মানায় অংশকে সংলাপ থেকে বের করা হয়।

বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক প্রভাব

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসলামী ঐক্যজোটের এই দ্বন্দ্ব নির্বাচনের সময় ভোট ও রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। সংলাপ থেকে একাংশের বেরিয়ে যাওয়া দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করেছে।

এর পাশাপাশি, কমিশনের কঠোর অবস্থান অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও precedential নির্দেশনা প্রদান করেছে। সংলাপের নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

সংলাপ থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশকে বের করা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা রক্ষা করার জন্য নেওয়া পদক্ষেপ। যদিও দলের ভেতরে বিভাজন এবং উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ আরও স্পষ্ট হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ ও সমন্বয় আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে ভোট প্রক্রিয়া, অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নজর দেওয়া সম্ভব হবে।

এম আর এম – ২২৬৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button