আঞ্চলিক

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ২৯ জেলে-মাঝিসহ ট্রলার ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড

Advertisement

বঙ্গোপসাগরে ঘন কুয়াশায় দিকভ্রান্ত হয়ে পড়া একটি বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলারকে আটক করে ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা উপকূলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের বিরুদ্ধে। ট্রলারে থাকা ২৯ জেলে-মাঝি বর্তমানে ভারতের কোস্টাল থানার হেফাজতে থাকার খবর পাওয়া গেছে।

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘন কুয়াশার মধ্যে পথ হারানো একটি বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলারকে ভারতীয় কোস্ট গার্ড আটক করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ট্রলারটিতে থাকা ২৯ জন জেলে ও মাঝি ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা কোস্টাল থানার হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রলারের মালিকপক্ষ। এ ঘটনায় পরিবারগুলোতে উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনা ও আটক প্রক্রিয়া

মহেশখালীর ধলঘাটা এলাকা থেকে ‘আমানা গণি’ নামের মাছ ধরার ট্রলারটি ১৩ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। ট্রলারের মালিক চট্টগ্রামের ফিশারীঘাট এলাকার সৈয়দ নূর নিশ্চিত করেছেন যে, ট্রলারটিতে দুইজন মাঝিসহ মোট ২৯ জন জেলে ছিলেন।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার রাতে হঠাৎ ঘন কুয়াশা নেমে আসায় ট্রলারটি দিকনির্দেশনা হারিয়ে ফেলে। ঠিক সেই সময় ট্রলারের ক্রুরা মালিকপক্ষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানান যে তারা কুয়াশায় দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন এবং আশপাশের পরিবেশ ঠিকমতো শনাক্ত করতে পারছেন না।

পরবর্তীতে মাঝিদের মাধ্যমে মালিককে জানানো হয়, ভারতীয় কোস্ট গার্ড ট্রলারটিকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং পরবর্তীতে সেটি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা অঞ্চলের উপকূলে নিয়ে যায়। এখন তারা স্থানীয় কোস্টাল থানার হেফাজতে রয়েছেন।

কুয়াশাজনিত ঝুঁকি

বঙ্গোপসাগরে শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশা একটি সাধারণ সমস্যা, যার কারণে মাছ ধরার ট্রলারগুলো দিকভ্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অতীতেও একাধিকবার এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি জেলেদের ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ার অভিযোগ এসেছে, যার ফলে দুই দেশের কোস্ট গার্ডের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিও হয়েছে।

সামুদ্রিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কম দৃশ্যমানতা ও হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এমন ঝুঁকি প্রতিনিয়তই থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নির্ভুল ন্যাভিগেশন সিস্টেম না থাকায় এসব ট্রলার সহজেই নিরাপদ সীমানা হারিয়ে ফেলে। এবারও তেমনই পরিস্থিতিতেই জেলেরা ভুলবশত সীমান্ত অতিক্রম করে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরিবারের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া

ট্রলারের ২৯ জন জেলের পরিবারগুলোর মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। মহেশখালীর নেছার আহমদের স্ত্রী সালেহা বেগম জানান যে শনিবার সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে ফোনে শেষ কথা হয়। তিনি জানান, ট্রলারটি কুয়াশায় দিক ভুলে অজানা দিকে এগোচ্ছে। এরপর রাত ৯টার পর আর কোনো ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

আরেক জেলে মিঠুর স্ত্রী ডলি আক্তার জানান, তারা সারারাত অপেক্ষা করেও কোনো খবর পাননি। তিনি সরকারের কাছে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান যাতে জেলেরা নিরাপদে ফিরে আসতে পারেন।

পরিবারের সদস্যদের মতে, জীবিকার জন্য সাগরে পাড়ি জমানো এসব মানুষ এখন গুরুতর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রা অনিশ্চয়তার মুখে।

সরকারি সংস্থার যোগাযোগ ও বর্তমান অবস্থা

ট্রলারটির মালিকপক্ষ জানিয়েছে যে তারা বিষয়টি মৌখিকভাবে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কেন ট্রলারটি আটক করেছে, সেই বিষয়েও কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অনেকেই মন্তব্য করতে রাজি হননি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের কোস্ট গার্ডের মধ্যে বিদ্যমান যোগাযোগ কাঠামো সক্রিয় থাকলে এমন পরিস্থিতির সমাধান দ্রুত সম্ভব।

মতামত ও আঞ্চলিক বাস্তবতা

আঞ্চলিক কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত-বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে অতীতে একাধিকবার জেলে আটকের ঘটনা ঘটেছে। যদিও বেশি সময় লাগেনি তাদের ফিরিয়ে আনতে, তবু প্রতিটি ঘটনাই নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করে।

বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তবর্তী সাগর এলাকায় যৌথ নজরদারি বা সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে মাছধরা ট্রলারগুলোর জন্য জিপিএস ও নিরাপদ ন্যাভিগেশন সিস্টেম বাধ্যতামূলক করা গেলে দিকভ্রান্ত হয়ে বিদেশি জলসীমায় প্রবেশের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।

বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলারটি ভারতীয় কোস্ট গার্ডের হাতে আটক হওয়ায় জেলেদের পরিবার গভীর দুশ্চিন্তায় রয়েছে। দুই দেশের প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ না হলে জেলেদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সামুদ্রিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা কত দ্রুত সক্রিয় হয় এবং পরিস্থিতি কীভাবে এগোয়, তা-ই দেখার বিষয়।

এম আর এম – ২২৫৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button