ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার দিন রাজধানীতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল। লকডাউন ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
আগামী সোমবার ঘোষণা হতে যাচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়। রায়কে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী সহ আটটি দল জানিয়েছে যে রায়ের দিন তারা মাঠে অবস্থান করবে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আট দলের এই অবস্থানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘটনা ও ঘোষণার বিস্তারিত
রবিবার ঢাকায় আট দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, রায় ঘোষণার দিনে তাদের দলসহ আটটি রাজনৈতিক দল মাঠে থাকবে। তিনি বলেন, অতীতেও তারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠে থেকেছেন, এবারও জনগণের স্বার্থে এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতেই তারা মাঠে অবস্থান করবে।
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়ানোর বা নাশকতার সুযোগ যেন কেউ না পায়, সে জন্য তারা শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে থাকবে। তার দাবি, জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করবে।
রায়ের পটভূমি ও মামলার অগ্রগতি
জুলাই-আগস্টের অস্থিরতার সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলাটি এখন রায় ঘোষণার অপেক্ষায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর তিন সদস্যের বেঞ্চ কয়েক মাস আগে পুরো যুক্তিতর্ক শুনে রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ উভয়েই আদালতে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেছে। রায় যেদিন ঘোষণা হবে, সে দিন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
আট দলের অবস্থান ও তাদের কর্মপরিকল্পনা
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুধু রায় ঘোষণার দিন নয়, সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে আট দল বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল জানান, তারা পাঁচ দফা দাবির পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে আসন্ন গণভোটে আট দল ‘হ্যাঁ’ বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জনগণকে সেই অবস্থান সমর্থন করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
তাদের মতে, গণভোটে জনগণের মতামতই হবে দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের ভিত্তি। এই পাঁচ দফার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নির্বাচনী সংস্কার, স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা ও নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা।
লকডাউন পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউনের প্রসঙ্গও সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে। আট দলের নেতারা দাবি করেন, লকডাউনের মতো কর্মসূচি জনগণের ভোগান্তি বাড়ায় এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক আন্দোলন যদি হয়ও, তা অবশ্যই শান্তিপূর্ণ এবং জনস্বার্থকে কেন্দ্র করে হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, রায়ের দিন মাঠে থাকার ঘোষণা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও তীব্র করতে পারে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রশাসনের দায়িত্ব বাড়বে।
সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে রায়কে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ও প্রত্যাশা — দুটোই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠে থাকার ঘোষণা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে পারে।
তবে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, আট দলের মাঠে থাকাকে তারা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ বা প্রহরী ভূমিকা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন পক্ষের উপস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়কও হতে পারে, যদি সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকে।
ব্যবসায়ী মহলও পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা আশা করছে, রায়ের দিন যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে না যায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে ধাক্কা না লাগে।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বড়ভাবে প্রভাবিত করবে। রায় ঘোষণার পরপরই দেশে নতুন রাজনৈতিক গতিপ্রবাহ তৈরি হতে পারে।
তারা বলছেন, আদালতের রায় যাই হোক, নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্রের চর্চা এবং রাজনৈতিক শান্তি বজায় রাখা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বিশ্লেষক আরও মনে করছেন, রায়ের দিন মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর দেশের স্থিতিশীলতা অনেকাংশে নির্ভর করবে।
সব মিলিয়ে রায় ঘোষণার দিন রাজধানীতে জামায়াতসহ আট দলের মাঠে থাকার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম। রায়ের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, সেটা এখন জাতির প্রধান আলোচনার বিষয়। বিশ্লেষকদের মতে, রায় ঘোষণার পরপরই দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান ও সরকারের পদক্ষেপ কীভাবে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে।
এম আর এম – ২২৫৮,Signalbd.com



