ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বড় পর্দায় স্থাপন করে সম্প্রচার করা হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির মামলার রায়। একইসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনেও সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামীকাল। রায়কে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে রাজধানীজুড়ে। সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও তথ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয়ে ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে বড় পর্দা বসিয়ে রায় সরাসরি দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) রায়টি সম্প্রচার করবে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
রায় ঘোষণা নিয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জনগণের জন্য রায়টি উন্মুক্ত করতে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় বড় আকারের স্ক্রিন বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুপুরের মধ্যেই বিভিন্ন মোড়ে প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম স্থাপন সম্পন্ন হবে।
বিটিভি কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ট্রাইব্যুনাল থেকে অনুমতি পাওয়ার পরই তারা সরাসরি সম্প্রচারের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। একইসঙ্গে দেশের অন্যান্য টিভি চ্যানেল চাইলে বিটিভির সিগন্যাল ব্যবহার করে অনুষ্ঠানটি প্রচার করতে পারবে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত পটভূমি
জুলাই মাসে সংঘটিত সহিংস ঘটনাবলীর পর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এ মামলা করা হয়। পরবর্তী সময়ে তদন্তের ভিত্তিতে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন রাখা হয়।
শুরুতে শেখ হাসিনা একমাত্র আসামি ছিলেন। পরে তদন্তের অগ্রগতির ভিত্তিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়। মামলার শুনানি দীর্ঘদিন ধরে চলেছে এবং উভয় পক্ষ আদালতে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে।
ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। বিচারকরা ইতোমধ্যেই পুরো মামলার যুক্তিতর্ক পর্যালোচনা শেষে রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেছেন।
রাজধানীতে বড় পর্দা বসানোর কারণ ও তাৎপর্য
বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত মূলত জনগণের আগ্রহ এবং গণমাধ্যমের চাহিদাকে কেন্দ্র করে। সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় বা জাতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে গণপ্রবাহের কারণে বড় স্ক্রিনে সম্প্রচার অনেক জায়গায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রায়টি দেশবাসীর কাছে চরম গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ঘরে বসে বা ইন্টারনেটে সংযোগ না থাকায় সরাসরি দেখতে পারেন না। তাই বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে ঘটনাটি স্বচ্ছভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।
বিভিন্ন সংগঠনও জানায়, বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকর রাখতেও এমন উদ্যোগকে তারা ইতিবাচকভাবে দেখছে।
রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
রাজধানীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশ, র্যাব ও সংশ্লিষ্ট বাহিনী ইতোমধ্যেই বাড়তি মোতায়েন শুরু করেছে। বড় পর্দাগুলোর স্থাপনার পাশে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রায় ঘোষণার দিন ভিড় বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় নজরদারি আরও জোরদার থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত ইউনিট মোতায়েন থাকবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তারা শান্ত পরিবেশ বজায় রাখেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলেন।
আইনি দিক ও উভয় পক্ষের দাবি
মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, তাদের কাছে মামলার অভিযোগ প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্য ও নথিপত্র রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদনও করেছেন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীদের পক্ষে আসামিপক্ষের দাবি, অভিযোগগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তারা খালাস চেয়েছেন। আদালত যুক্তিতর্ক শুনে এখন রায় ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায় যাই হোক, এর প্রভাব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের জন্যও এ রায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও আশা
ঢাকার সাধারণ মানুষ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ব্যবহারকারীরা ইতোমধ্যেই আলোচনায় ব্যস্ত। অনেকে মনে করছেন, বড় পর্দায় রায় সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত জনগণের জানার অধিকার নিশ্চিত করবে।
শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী এবং বিভিন্ন পেশাজীবী জানাচ্ছেন, তারা রায়টি সরাসরি দেখবেন। অনেকে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যদিও কিছু মানুষ রায়কে কেন্দ্র করে অযথা গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং সবাইকে উৎসাহিত করছেন সরকারি তথ্যসূত্র অনুসরণ করতে।
সব মিলিয়ে ঢাকার মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় রায় সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত জনমনে বিশেষ আগ্রহ তৈরি করেছে। আগামীকাল রায় ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেবে, সেটাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্লেষকদের মতে, রায়ের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ও সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক বাস্তবতা।
এম আর এম – ২২৫৭,Signalbd.com



