রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস: বাংলাদেশের আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের ৪৫তম বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন আজ রবিবার রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুর জেলার রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অবস্থিত অর্ডন্যান্স সেন্টার অ্যান্ড স্কুল (ওসিএন্ডএস)-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের অবদানের গুরুত্বকে সামনে রেখে এই সম্মেলনটি প্রতিবারই আয়োজিত হয়।
সন্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, যিনি অনুষ্ঠানে কোরের সকল অধিনায়কদের উদ্দেশে বিশেষ বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁর বক্তব্যে কোরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, দেশমাতৃকার সেবায় অবদান এবং আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জনের গুরুত্বকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।
সেনাবাহিনী প্রধানের মূল্যবান বক্তব্য
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলনে বলেন, “আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের সকল সদস্যদের নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি, নতুন প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার মাধ্যমে আমাদের কোরকে একবিংশ শতাব্দীর প্রতিকূল ও কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, কোরের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, গবেষণা, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রতিটি ইউনিটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোরের সদস্যরা যেন প্রতিনিয়ত নিজেকে আধুনিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হন, সেই বার্তা তিনি দেন।
সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
আর্মি অর্ডন্যান্স কোর মূলত সেনাবাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ, সরঞ্জাম ও লজিস্টিক সাপোর্টের সঙ্গে জড়িত। দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কোরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো:
- কোরের সকল ইউনিটের অধিনায়কদের মধ্যে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়।
- নতুন নীতি, কর্মপরিকল্পনা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা।
- কোরের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য উদ্ভাবনী ধারণা ও দক্ষতা বৃদ্ধি।
- যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
এই সম্মেলন কোরের ইতিহাস, গৌরব ও ভবিষ্যৎ অগ্রগতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের আধুনিকীকরণ ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
বিগত কয়েক বছরে আর্মি অর্ডন্যান্স কোর প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ এবং স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কোরের বিভিন্ন ইউনিটে নতুন যন্ত্রপাতি, উন্নত প্রযুক্তি এবং আধুনিক অস্ত্রপ্রণালী সংযোজন করা হয়েছে।
ওসিএন্ডএস-এর কমান্ড্যান্ট জানান, কোরের কর্মকর্তাদের গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোরের সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের বিকাশ হচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধানও এই দিকটি বিশেষভাবে তুলে ধরে বলেন, “প্রতিটি ইউনিট যেন প্রযুক্তিগত ও প্রশিক্ষণগত দিক থেকে সমৃদ্ধ হয়, তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।”
সম্মেলনে উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন:
- জিওসি, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (আর্টডক)
- জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার, লজিস্টিকস এরিয়া
- কমান্ড্যান্ট, বিওএফ
- কমান্ড্যান্ট, ওসিএন্ডএস
- আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের সকল ইউনিটের অধিনায়কগণ
- সেনাবাহিনী ও গণমাধ্যমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকরা
সেনাবাহিনী প্রধান ওসিএন্ডএসে পৌঁছালে তাঁকে উক্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অভ্যর্থনা জানান। এর মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-এর মধ্যে রয়েছে:
- আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামের উৎপাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণ
- প্রযুক্তিগত গবেষণা এবং উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়ন
- কোরের সদস্যদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধি
- দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করা
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কোর আরও দক্ষ, স্বনির্ভর এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ভিত্তিক শক্তি হিসেবে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে।
বাংলাদেশ আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের ৪৫তম বার্ষিক অধিনায়ক সম্মেলন দেশের প্রতিরক্ষা খাতে কোরের অবদানের গুরুত্ব এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের দিক তুলে ধরেছে। সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোরের সকল সদস্যরা আধুনিক প্রযুক্তি, পেশাগত দক্ষতা এবং গবেষণার মাধ্যমে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের অবদান আরও শক্তিশালী করবে।
এই সম্মেলন কেবল কোরের কর্মকর্তাদের মধ্যে নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ আর্মি অর্ডন্যান্স কোরের এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ অগ্রগতি প্রতিটি নাগরিকের জন্য এক নতুন প্রেরণার উৎস।
MAH – 13834 I Signalbd.com



