বাংলাদেশের বিনোদন জগতের পরিচিত মুখ, মডেল ও অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী এবং তার ভাই আলিসান চৌধুরীকে ধর্ষণ, হুমকি-ধামকি এবং অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই মামলাটি ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর মাধ্যমে দায়ের করা হয়, এবং আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
মামলার পটভূমি
মামলার তথ্য অনুযায়ী, বাদী আমিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে মেহজাবীনের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। পরিচয়ের সুবাদে মেহজাবীন তাকে নতুন পারিবারিক ব্যবসার অংশীদার হিসেবে দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে ৭৪ লাখ টাকা নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তবে, অভিযোগ অনুযায়ী, মেহজাবীন ও তার ভাই ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। বাদী টাকা ফেরত চাইলে তারা বারবার “আজকে দেবো, কালকে দেবো” বলে সময় নষ্ট করেন। এর পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে, বাদী টাকা চাইতে গেলে তারা হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে তাকে ডেকে গালিগালাজ ও হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করেন।
বাদীর বয়ানে বলা হয়েছে, তারা বলেছেন,
“তুই আমাদের বাসায় টাকা চাইতে যাবি না, তোকে বাসার সামনে দেখলে জানে মেরে ফেলব।”
এই ঘটনায় বাদী ভয় অনুভব করে সংশ্লিষ্ট ভাটারা থানায় যান, যেখানে থানার কর্মকর্তারা আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন।
আদালতের নির্দেশনা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
মেহজাবীন এবং তার ভাই আলিসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত ১০ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এছাড়াও, গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৮ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মামলায় আসামিদের হাজিরা দেওয়ার জন্য বারবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত কঠোর পদক্ষেপ নেয়।
মামলার আইনি ভিত্তি
এই মামলাটি ফৌজদারী কার্যবিধি ১০৭/১১৭(৩) ধারার আওতায় দায়ের করা হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা ধর্ষণ, হুমকি এবং অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কিত গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাদীকে শারীরিকভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর অপরাধ।
বিনোদন জগতে প্রভাব
মেহজাবীন চৌধুরী বাংলাদেশের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন টেলিভিশন নাটক, বিজ্ঞাপন এবং শো-তে কাজ করেছেন। এই মামলার কারণে তার পেশাদার ক্যারিয়ার ও সুনাম প্রভাবিত হতে পারে। বিশেষ করে, বিনোদন শিল্পে এমন মামলা সেলিব্রিটিদের জন্য চরম সতর্কতার বার্তা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটেও আলো ফেলেছে। এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে বিনোদন জগতে পরিচিত মুখের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন করার সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
আইন এবং নাগরিকদের সতর্কতা
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, “যে কোনও ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে লিখিত চুক্তি ও প্রমাণ সংরক্ষণ অপরিহার্য। পরিচিতি বা জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে কাউকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করা বিপজ্জনক হতে পারে।”
বিনোদন ব্যক্তিত্বরা প্রায়শই সামাজিক মাধ্যম ও পরিচিতি ব্যবহার করে লোকেদের কাছে প্রভাব তৈরি করেন। কিন্তু এই মামলা প্রমাণ করে যে, পরিচিতি বা জনপ্রিয়তা কোনো আইনি নিরাপত্তা দেয় না।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরবর্তী পদক্ষেপ
- আসামিদের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন আগামী ১৮ ডিসেম্বর দাখিল করতে হবে।
- আদালত মামলা চলাকালীন সময়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
- আইন অনুযায়ী, আসামিরা আদালতে উপস্থিত না হলে আইনানুগ জটিলতা বাড়তে পারে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই মামলার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক নাগরিক মন্তব্য করেছেন যে, জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সামাজিক সচেতনতা বাড়াবে। অনেকেই বলেছেন যে, ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অপরিহার্য।
বিনোদন সংবাদ ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলা বাংলাদেশের বিনোদন শিল্পে একটি নজির সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদেরও আইনের আওতায় আনা হয়।
সারসংক্ষেপ
- বাদী: আমিরুল ইসলাম
- আসামি: মেহজাবীন চৌধুরী এবং আলিসান চৌধুরী
- অভিযোগ: টাকা আত্মসাৎ, হুমকি-ধামকি, ভয়ভীতি
- অপরাধের পরিধি: ফৌজদারী কার্যবিধি ১০৭/১১৭(৩)
- আদালতের পদক্ষেপ: গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, তামিল প্রতিবেদন ১৮ ডিসেম্বর
- প্রভাব: বিনোদন শিল্পে সতর্কবার্তা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি
MAH – 13826 I Signalbd.com



