জাতীয়

হাসিনার মানবতাবিরোধী রায় দেখবে বিশ্ব, ঢাকার উদযাপন

Advertisement

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসন্ন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন ঠিক হয়েছে সোমবার, ১৭ নভেম্বর। এই রায় সরাসরি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের জন্য সম্প্রচার করা হবে। পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষও সরাসরি দেখতে পারে।

আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক নজরে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া

সূত্র জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছিল। এই মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসী। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায় সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকাবাসীর জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় পর্দা বসাবে, যেখানে সাধারণ মানুষ রায়ের সম্প্রচার সরাসরি দেখতে পারবেন। এটি হবে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রমাণ।

রায়ের দিন নির্ধারণ এবং ট্রাইব্যুনালের তথ্য

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে। গত ১৩ নভেম্বর দুপুর ১২টা ৯ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান, বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই তারিখ ঘোষণা করেন।

বিচারিক প্যানেলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন:

  • বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ
  • বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী

প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ সহ অন্যান্যরা।

মামলার পটভূমি এবং প্রধান যুক্তি

গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নেওয়া উদাহরণ দিয়ে দেখান, কিভাবে উচ্চপদস্থ নেতাদেরও বিচার করা হয়ে থাকে। তিনি দাবি করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।

এরপর প্রসিকিউশন ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করেন। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আসামিপক্ষের যুক্তির পাল্টা জবাব দেন। এরপর স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন আবারও তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন।

এই ধাপ শেষে ট্রাইব্যুনাল রায়ের তারিখ ঘোষণা করে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে রায় ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে জুলাই ২০২৪ সালের গণহত্যার প্রথম রায় শোনার সুযোগ আসছে।

আসামিরা এবং তাদের অবস্থান

মামলার তিন আসামির মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। এজন্য তাঁর বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের চরম শাস্তির দাবি উপেক্ষা করে। মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদও তাঁর খালাস (অ্যাকুইটাল) চেয়েছেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় মোট ৮৪ সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০২৫ সালের ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ভয়ঙ্কর গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেন। শেষ সাক্ষ্যগ্রহণ ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের মাধ্যমে শেষ হয়।

মামলার অভিযোগ এবং প্রমাণাদি

প্রসিকিউশন তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে:

  1. উসকানি সৃষ্টির মাধ্যমে দাঙ্গা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা
  2. মারণাস্ত্র ব্যবহার
  3. আবু সাঈদ হত্যা
  4. চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড
  5. আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো

মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র মোট ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে:

  • তথ্যসূত্র: ২,০১৮ পৃষ্ঠা
  • জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি: ৪,০৫৫ পৃষ্ঠা
  • শহীদদের তালিকা: ২,৭২৪ পৃষ্ঠা

সাক্ষী হিসেবে ৮৪ জনকে জেরা করা হয়েছে। ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সরাসরি সম্প্রচার ও জনগণের অংশগ্রহণ

রায় সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরাসরি দেখতে পারবে। ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হবে। এতে সাধারণ মানুষ সহজে বিচার প্রক্রিয়ার সাক্ষী হতে পারবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের মানুষ বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হবে। এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতার প্রতীক হবে।

রায়ের প্রভাব

এই মামলার রায় শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও আইন ব্যবস্থার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি উদাহরণ হবে যে, কোনো রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের এই রায়ের দিকে নজর রাখছেন। তারা দেখবেন কিভাবে একটি দেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীনভাবে এবং স্বচ্ছভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় প্রদান করছে।

১৭ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে ঘোষিত রায় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে লেখা হবে। দেশের মানুষ, আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ঢাকা শহরের মানুষ বড় পর্দায় দেখবে রায়। বিশ্বের মানুষ সরাসরি অনলাইনে তা দেখতে পারবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচার, যা দেশের ন্যায়বিচারের স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখবে।

MAH – 13823 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button