‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যশোরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই। তিনি নির্বাচনের গুরুত্ব ও তরুণদের দায়িত্বেও আলোকপাত করেন।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে যশোরে ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতি ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, আপা আর ফিরবেন না, এই চ্যাপ্টার ক্লোজড। তিনি দেশের আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে নাগরিকদের দায়িত্বশীল ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।
মাহমুদুর রহমানের মূল বক্তব্য
মাহমুদুর রহমান বলেন,
“বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধ্যায় শেষ। আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে বিদেশি ষড়যন্ত্রও প্রতিহত করা সম্ভব হবে।”
তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ভারতের সঙ্গে দালালিত্ব করে কেউ এই দেশে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তরুণদেরকেই এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে যাতে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়।
সভার প্রেক্ষাপট
বহুমাত্রিক জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র প্রাচ্যসংঘ আয়োজিত এই সভা বিকালে যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সুপ্রিম কাউন্সিলের সদস্য আখতার ইকবাল টিয়া সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদ, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ এবং লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচন
মাহমুদুর রহমান বলেন, “আগামী তিন মাসে দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে এই নির্বাচনের অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং নির্বাচনে সহযোগিতা করতে হবে যাতে জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগের সুযোগ থাকে। “যদি ভারতীয় দালালমুক্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারি, তারা প্রয়োজনে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাজপথেও নেতৃত্ব দেবেন।”
জুলাই আন্দোলনের স্মরণ
বক্তব্যের শুরুতে মাহমুদুর রহমান জুলাই আন্দোলনের শহীদ আনাসের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে অনেক তরুণ শহীদ হয়েছেন। আনাস তার মায়ের কাছে একটি চিঠি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “আমার ভাইয়েরা যখন রাস্তায় ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধে জীবন দিচ্ছেন, তখন আমি ঘরে থাকতে পারলাম না।”
মাহমুদুর রহমান সকল রাজনৈতিক দলকে স্মরণ করিয়ে দেন, শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করলে শহীদদের স্বপ্ন পূরণ হবে না। তাদের স্বপ্ন বোঝা ও তা বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।
তরুণদের দায়িত্ব
তিনি বলেন, তরুণরা দেশের গণতন্ত্র রক্ষা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে এই প্রজন্মের ন্যায্য ও সততার ওপর। ভারতের সঙ্গে দালালিত্বকারীরা যেন ক্ষমতায় টিকে না থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করতে যুব সমাজকে সক্রিয় হতে হবে।
রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের প্রতি আহ্বান
মাহমুদুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে দেশ ও জাতি তা ক্ষমা করবে না। তিনি নাগরিকদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান, যাতে তারা তাদের ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে পারে।
মাহমুদুর রহমানের বক্তব্যে স্পষ্ট করা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত নেতার দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই এবং দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় তরুণদের ও রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব অপরিহার্য। ভবিষ্যতের নির্বাচনে সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে সচেতনতা এবং দায়িত্বশীলতার বার্তা তুলে ধরা হয়েছে।
এম আর এম – ২২৫৩,Signalbd.com



