আঞ্চলিক

সিরাজগঞ্জে নৌযান থামিয়ে চাঁদাবাজি, ইউপি সদস্য-সমন্বয়কসহ আটক ১০

Advertisement

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে চাঁদাবাজির সময় নৌপুলিশ হাতেনাতে ১০ জনকে আটক করেছে। আটককৃতদের মধ্যে এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও স্থানীয় সমন্বয়ক রয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় নৌপুলিশ যমুনা নদীতে বালুবাহী নৌযান থামিয়ে চাঁদাবাজির সময় এক ইউপি সদস্যসহ দশজনকে আটক করেছে। শনিবার দুপুরে ঘোড়জান এলাকার নদী থেকে তাদের ধরা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং তাদের আদালতে পাঠানো হবে।

আটককৃতদের পরিচয়

ধরা পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে ঘোড়জান ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মানিক সিকদার (৫৫), চৌহালী উপজেলার ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ধারী আল আমিন (২৪) এবং আরও আট জন স্থানীয় বাসিন্দা। তাদের সকলের বাড়ি ঘোড়জান ইউনিয়নের রেহাই কাউলিয়া গ্রামে। এছাড়া আটককৃতদের মধ্যে নজরুল ইসলাম (৪৫), শহীদুল ইসলাম (৩৫), আবদুল আলীম (৪০), শরীফুল ইসলাম (৩৫), জাহাঙ্গীর হোসেন (৩৫), ইউনুস আলী (২৬), শহীদুল ইসলাম (৪৫) এবং ফরিদ হোসেন (২৬) রয়েছেন।

নৌপুলিশ সূত্র জানায়, আটককৃতরা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড থামিয়ে চাঁদা আদায় করছিল।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার যমুনা নদীর বিভিন্ন বালুমহাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন শত শত বাল্কহেড নৌপথে চলাচল করে। এই বালুবাহী নৌযানগুলোতে চাঁদাবাজির একটি স্থায়ী চক্র কাজ করে। চাঁদা দিতে অনীচ্ছে নৌযানকে থামিয়ে ভয়ভীতি, হুমকি প্রদর্শন এবং প্রয়োজনে মারধরের ঘটনা ঘটানো হয়।

বিশেষত ঘোড়জান ইউনিয়নের মুরাদপুর ও রেহাই কাউলিয়া স্পটগুলোতে এই চাঁদাবাজি প্রতিদিন চলত। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নৌপথে নিরাপদে বালু পরিবহণ করতে চাঁদাবাজি চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে হিমশিম খেতেন।

অভিযান ও আটক প্রক্রিয়া

চৌহালী নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ আহম্মেদ জানিয়েছেন, চাঁদাবাজদের ৪ জনকে সরাসরি চাঁদা আদায় করার সময় আটক করা হয়। আর বাকি ৬ জনকে ধাওয়া করে ধরে নেওয়া হয়েছে। অভিযানের সময় একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, নগদ দুই হাজার টাকা এবং ১০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

ওসি ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, “নৌপথকে নিরাপদ রাখার জন্য এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যেকোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছি।”

পুনরাবৃত্ত ঘটনার তথ্য

চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীতে বালুবাহী নৌযান থেকে চাঁদাবাজি নতুন ঘটনা নয়। অদূর অতীতে একই এলাকার নৌপথে চাঁদাবাজি ও নৌকা থামানোর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। নদী এবং বালুমহালগুলোতে প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চাঁদাবাজি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল।

নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েও সম্পূর্ণভাবে চক্র ভেঙে ফেলতে পারেনি। তবে সাম্প্রতিক এ অভিযানকে স্থানীয়রা একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং নৌপথ ব্যবহারকারীরা এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেন, “চাঁদাবাজির কারণে নৌপথে কাজ করা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এবার পুলিশি অভিযান আমাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।”

অভিযোগ রয়েছে, চাঁদাবাজরা না চাঁদা দিলে নৌকা বন্ধ করে দিতে হুমকি দিত এবং মারধরের ঘটনা ঘটাত। এই ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার ফলে নৌপথে পরিবহণ স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষণ ও নিরাপত্তা বিষয়ক মন্তব্য

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, যমুনা নদীর মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নৌপথে চাঁদাবাজি প্রতিদিনকার সমস্যা। নৌপুলিশের এই ধরণের অভিযান ভবিষ্যতে অপরাধীদের নাকের ডগায় নাগাল রাখার একটি কার্যকর উদাহরণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধির মাধ্যমে নদী ও বালুমহালগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা সম্ভব।

সিরাজগঞ্জে চাঁদাবাজি রোধে নৌপুলিশের অভিযান এলাকার নৌপথে কার্যক্রমের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলমান এবং তারা কোর্টে পাঠানো হবে। প্রশাসন আশা করছে, এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চালালে নদী ও বালুমহালগুলোতে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে এবং চাঁদাবাজি চক্রের কার্যক্রম বন্ধ হবে।

এম আর এম – ২২৪৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button