জাতীয়

সোহরাওয়ার্দীতে খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনে পদে পদে ভিড়

Advertisement

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার (১৫ নভেম্বর, ২০২৫) সকাল থেকেই খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনের জন্য উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের আয়োজিত এ মহাসম্মেলনে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে, বাস, মেট্রোরেল এবং ব্যক্তিগত যানবাহনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে পৌঁছান।

সম্মেলনটি সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এবং দুপুর পর্যন্ত চলবে। এই মহাসম্মেলনে আলেম-ওলামা, শিক্ষার্থী, ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। তাদের উপস্থিতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত করেছে।

খতমে নবুওয়তের পবিত্র আকিদা রক্ষায় আন্তর্জাতিক আলেমদের উপস্থিতি

সম্মেলনের মূল উদ্যোক্তা ও দায়িত্বশীল মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী জানান, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং খতমে নবুওয়তের পবিত্র আকিদা রক্ষার দাবিতে এ মহাসম্মেলন আয়োজিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন দেশের শীর্ষ আলেমরা এই সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন।

বিদেশি অতিথিদের মধ্যে আছেন:

  • ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানী
  • মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শায়খ মুসআব নাবীল ইবরাহিম
  • জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি মুফতি ফজলুর রহমান
  • জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের (ভারত) সভাপতি মাওলানা সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানি
  • বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের মহাসচিব মাওলানা হানিফ জালন্দরি
  • ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়ত মুভমেন্টের ওয়ার্ল্ড নায়েবে আমির শায়খ আব্দুর রউফ মক্কি
  • পাকিস্তানের ইউসুফ বিন্নুরী টাউন মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম ড. আহমাদ ইউসুফ বিন্নুরী
  • পাকিস্তানের মাওলানা ইলিয়াছ গুম্মান

বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত থাকবেন:

  • হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী
  • দারুল উলুম হাটহাজারীর মুহতামিম মাওলানা খলিল আহমাদ কুরাইশী
  • আল হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসান
  • বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মালেক
  • ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি রেজাউল করীম
  • খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক

মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক আলেম সমাজের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এটি এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য

মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী জানান, খতমে নবুওয়তের পবিত্র আকিদা রক্ষার পাশাপাশি এ মহাসম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো:

  1. ইসলামী উলামাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা
  2. কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের অমুসলিম অবস্থানকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া
  3. সাধারণ মুসলিম জনগণকে ধর্মীয় শিক্ষায় সমৃদ্ধ করা
  4. খতমে নবুওয়তের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষামূলক প্রচারণা চালানো

তিনি আরও বলেন, “এ সম্মেলন শুধু ধর্মীয় নয়, এটি একটি শিক্ষামূলক ও সামাজিক অনুষ্ঠানও। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একত্রিত শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ তৈরি করেছে।”

জনসমুদ্র ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত মানুষদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সম্মেলনস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, জরুরি চিকিৎসা সেবা, এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মহাসম্মেলনের কারণে আজ তাদের ব্যবসায়িক চাহিদা বেড়েছে। চা-স্টল, খাবারের দোকান, এবং পরিবহন ব্যবসায়ীরা উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হয়েছেন।

ধর্মীয় বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সম্মেলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন আলেমগণ ধর্মীয় বক্তৃতা প্রদান করেছেন। বক্তৃতায় ইসলামের মূল নীতি, খতমে নবুওয়তের গুরুত্ব, কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের অমুসলিম অবস্থান এবং মুসলিম সমাজের একতা বিষয়ক আলোচনাও হয়েছে।

তাছাড়া, শিশু ও কিশোরদের জন্য ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিচালিত হয়েছে। কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা, ইসলামি নাচ, এবং ধর্মীয় গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণবন্ত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহিমা ও সমালোচকরা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে খতমে নবুওয়ত সম্মেলনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক আলেমদের অংশগ্রহণ একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি শুধু ধর্মীয় ঐক্যই নয়, আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেছে।

তবে কিছু সমালোচক মনে করছেন, এই ধরনের মহাসম্মেলন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবও ফেলতে পারে। বিশেষ করে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও পরিবেশগত প্রভাবকে কেন্দ্র করে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

মহাসম্মেলনের সভাপতিত্ব

মহাসম্মেলনের সভাপতিত্ব করছেন সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের আহ্বায়ক এবং খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমির আল্লামা আবদুল হামিদ মধুপুর পীর। তিনি সমাপনী বক্তৃতায় মুসলিম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং খতমে নবুওয়তের পবিত্র আকিদা রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের কর্মকর্তারা জানান, ভবিষ্যতে এই ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আরও নিয়মিত আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশকে ধর্মীয় শিক্ষা ও আলেম সমাজের আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে।

আজকের মহাসম্মেলনটি কেবল ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও শিক্ষামূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। লাখো মানুষের উপস্থিতি, আন্তর্জাতিক আলেমদের অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্য এই সম্মেলনকে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে পরিণত করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই দৃশ্য মুসলিম সমাজের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐক্য প্রদর্শনের একটি নিদর্শন হয়ে থাকবে।

MAH – 13799 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button