ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বৃহস্পতিবার প্রতারণার অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে আদালত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাসের অতিরিক্ত সাজা ভোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আসামিরা উপস্থিত না থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে।
ঘটনার বিস্তারিত
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন এ রায় ঘোষণা করেছেন। আদালতের সহকারী নাজমুল ইসলাম তালুকদার জানান, মামলাটি তারই প্রক্রিয়ার অংশ যেখানে প্রমাণিত হয়েছে যে, আসামিরা গ্রাহকদের প্রতারণার উদ্দেশ্যে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করতেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালের ২০ মার্চ বাদী সাদিকুর রায়হান ইভ্যালির চমকপ্রদ অফারে তিনটি মোটরসাইকেল অর্ডার করেছিলেন। নির্ধারিত সময়ে মোটরসাইকেলগুলো হস্তান্তর না হওয়ায় এবং সিটি ব্যাংকের চেক নগদায়ন চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন।
মামলা
ইভ্যালি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি গাড়ি, মোটরসাইকেল, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন পণ্য অর্ধেক দামে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেছিল। অফারের প্রলোভনে অনেক গ্রাহক অগ্রিম অর্থ প্রদান করেছিলেন। কিন্তু মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় এবং অগ্রিম অর্থ ফেরত না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দায়ে পড়ে।
সালামি অনুসারে, রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কয়েকশো মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলাটি তারই একটি। এ পর্যন্ত তাদের ছয়টি মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান হয়েছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের ফলে ইভ্যালি এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেসের ব্যবসা ও গ্রাহক আস্থা দুই ক্ষেত্রেই প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রায়ের ফলে অনলাইন শপিং ব্যবস্থায় বিশ্বাস পুনঃস্থাপনে কিছুটা সহায়ক হবে। পাশাপাশি গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এটি একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করতে পারে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, রায় কার্যকর হলে ভবিষ্যতে অনলাইন প্রতারণার ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। তবে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, গ্রাহকরা এখনো ক্ষতিপূরণের জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে পারেন।
আদালতের নির্দেশনা ও আইনগত ব্যবস্থা
আদালত জানিয়েছে, আটক অবস্থায় না থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাসের অতিরিক্ত সাজা ভোগ করতে হবে। এটি প্রমাণ করে যে, আদালত অনলাইন প্রতারণা রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের রায় প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করবে এবং গ্রাহকের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করবে।
বিশ্লেষণ
অনলাইন শপিং বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা নতুন মাত্রা পায়। ইভ্যালির মামলার মতো রায় জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনের গুরুত্বও প্রমাণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে অনলাইন ব্যবসা পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও নিয়মিত তদারকি অপরিহার্য।
ঢাকা আদালতের পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায়ে ইভ্যালির রাসেল ও নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলো। এই রায় অনলাইন মার্কেটপ্লেসে গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন, এবং গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও পদক্ষেপ আশা করা যাচ্ছে।
এম আর এম – ২২১৮,Signalbd.com



