তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ের আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে দারুণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জয় করেছে ফরিদপুরের সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়। উত্তেজনাপূর্ণ এই ম্যাচে তারা টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী আদর্শ কলেজকে ২-০ গোলে পরাজিত করে।
মোহাম্মদপুরের সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত এই ফাইনাল ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল চরম উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রথমার্ধে উভয় দলই রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলতে থাকে, ফলে গোলের দেখা মেলেনি। দুই দলের ডিফেন্ডাররা ছিলেন সতর্ক, যার ফলে কোনো ফাঁকফোকর খুঁজে পাওয়া যায়নি আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের জন্য।
দ্বিতীয়ার্ধে নগরকান্দার জয়সূচক আক্রমণ
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ম্যাচের গতি কিছুটা বদলে যায়। সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ের খেলোয়াড়রা আক্রমণের ধার বাড়াতে থাকে। ম্যাচের শেষ দশ মিনিটে তারা প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে চাপ তৈরি করতে সমর্থ হয়। একের পর এক আক্রমণের ফলে আসে কাঙ্ক্ষিত ফল। ৮২ মিনিটে একটি দুর্দান্ত শটের মাধ্যমে প্রথম গোলটি করেন দলের প্রধান স্ট্রাইকার মেহেদী হাসান।
গোলের পর আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে নগরকান্দার খেলোয়াড়রা। প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো গোলের দেখা পান মিডফিল্ডার শাকিল আহমেদ, ৮৭ মিনিটে একটি কর্নার থেকে পাওয়া বলে হেডের মাধ্যমে গোলটি নিশ্চিত করেন তিনি। এই গোলেই মূলত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়।
জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় যোগদানের গৌরব
ফাইনালের এই জয়ের মাধ্যমে সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয় ও রানার-আপ মাওলানা ভাসানী আদর্শ কলেজ উভয় দলই ঢাকা বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতীয় পর্যায়ের এই টুর্নামেন্টে দেশের প্রতিটি বিভাগের সেরা দুটি করে দল অংশ নেবে, যেখানে দেখা যাবে দেশের উদীয়মান ফুটবল প্রতিভাদের লড়াই।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান
ম্যাচ শেষে এক জমকালো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার জনাব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, যিনি বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক), জনাব মোঃ আলী আজম।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষ জনাব মুমিনুল হাসান, ক্রীড়া পরিদপ্তরের সাবেক সহকারী পরিচালক তারিকুজ্জামান নান্নু এবং ঢাকা জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা সুমন কুমার মিত্র। তাদের উপস্থিতি এই টুর্নামেন্টের গুরুত্বকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
তারুণ্যের উৎসব ২০২৫: খেলার মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ
“এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে তারুণ্যের উৎসব ২০২৫-এর অংশ হিসেবে এই আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় টুর্নামেন্টটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
এই ধরনের প্রতিযোগিতা দেশের তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলার মাধ্যমে নেতৃত্বগুণ, শৃঙ্খলা এবং টিমওয়ার্ক শেখার সুযোগ দেয়। এছাড়া, এ ধরনের আয়োজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলে।
বিজয়ী দলের প্রতিক্রিয়া
বিজয়ী দলের অধিনায়ক বলেন, “এই জয় আমাদের দলের কঠোর পরিশ্রমের ফল। পুরো টুর্নামেন্টে আমরা একসঙ্গে খেলেছি এবং একে অপরকে সমর্থন করেছি। জাতীয় পর্যায়ে আমাদের লক্ষ্য আরও ভালো করা।”
দলের কোচও সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের খেলোয়াড়রা দারুণ পারফর্ম করেছে। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে তারা যেভাবে আক্রমণে ধার বাড়িয়েছে, তা প্রশংসনীয়। আশা করছি, জাতীয় পর্যায়েও আমরা ভালো ফলাফল করব।”
টুর্নামেন্টের গুরুত্ব
এই ধরনের আঞ্চলিক টুর্নামেন্ট দেশের ফুটবল বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার পাশাপাশি, এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে যেখানে তারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এমন উদ্যোগ দেশের খেলাধুলার অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।
সমাপ্তি
ফাইনালের এই উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ের জয় শুধুমাত্র একটি ট্রফি জয়ের গল্প নয়; এটি তাদের ঐক্য, পরিশ্রম, এবং প্রতিভার প্রতিফলন। এই জয়ের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছে যে সঠিক প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।