চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার চশমাহিল এলাকায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় পুলিশ বাড়ির ভেতর থেকে সন্দেহভাজন সাতজনকে আটক করে।
পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীরা বৈঠক করছে। খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং পুরো বাড়িতে তল্লাশি চালায়।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান বলেন, “আমরা খবর পাই যে নওফেল সাহেবের বাড়িতে রাজনৈতিক বৈঠক হচ্ছে। খবরের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখি সাতজন ব্যক্তি সেখানে অবস্থান করছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে থানায় আনা হয়েছে।”
আটক ব্যক্তিরা রেস্টুরেন্ট কর্মী বলে দাবি
তল্লাশির সময় আটক হওয়া সাতজন নিজেদেরকে একটি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, তারা ‘মিলানো’ নামের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন এবং খাবার ডেলিভারির কাজে যুক্ত।
ওসি সোলাইমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, নওফেল চৌধুরীর পরিচালিত ওই রেস্টুরেন্টে তারা কাজ করেন। পুলিশ তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করছে এবং তারা কোনো নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “বাড়িতে কোনো ধরনের বৈঠকের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে আটক ব্যক্তিদের পরিচয় ও উদ্দেশ্য যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঘটনার পটভূমি ও ফেসবুক পোস্টের সূত্র
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একজন স্থানীয় ব্যক্তি ফেসবুকে পোস্ট দেন যে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় দলীয় নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক করছেন। পোস্টটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশ সেটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।
এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কায় তারা আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল। তাই সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো যেকোনো তথ্য তারা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করছেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন প্রশ্ন
চট্টগ্রামে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে এ ধরনের অভিযান রাজনৈতিকভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কিছু নেতা বিষয়টিকে “অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তিকর” বলে দাবি করেছেন।
একজন স্থানীয় নেতা বলেন, “নওফেল ভাই দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে আছেন। তার বাড়িতে কোনো বৈঠক বা দলীয় কার্যক্রম হয়নি। রেস্টুরেন্টের কিছু কর্মচারীকে ধরে নেওয়া হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।”
অন্যদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি নিয়মিত সতর্কতা অবলম্বনের অংশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বাড়িতে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখা গেলে তা যাচাই করা হয় — এটি পুলিশের নিয়মিত প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্তে কী বলছে পুলিশ
ওসি মো. সোলাইমান বলেন, “আমরা এখন আটক সাতজনের পরিচয় যাচাই করছি। তারা কোনো রাজনৈতিক বা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে, না হলে ছেড়ে দেওয়া হবে।”
পুলিশ জানায়, অভিযানের সময় বাড়ির বিভিন্ন অংশে তল্লাশি চালানো হলেও কোনো বেআইনি কিছু পাওয়া যায়নি। তবে ভবিষ্যতে এমন তথ্য পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ পুলিশের তৎপরতাকে প্রশংসা করলেও, অনেকেই এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এই সময়ের যেকোনো পুলিশি অভিযান তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনায় আসে। বিশেষ করে যেসব নেতারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তাদের ঘিরে ঘটনার প্রভাব আরও বেশি হয়।
একজন স্থানীয় রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন, “এই ধরনের অভিযান যদি শুধুই নিরাপত্তা তৎপরতা হয়, তবে তা ইতিবাচক। তবে যদি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়, তাহলে এটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।”
চট্টগ্রামে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বাড়িতে তল্লাশি ও সাতজন আটক হওয়ার ঘটনাটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পুলিশ বলছে এটি নিয়মিত অভিযান, তবে রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হলে এবং তদন্ত শেষে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ পেলে বোঝা যাবে, এটি নিছক ভুলবোঝাবুঝি ছিল নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে ছিল।
এম আর এম – ২২০২,Signalbd.com



