বিশ্ব

পাকিস্তানকে ‘অবৈধ’ যুদ্ধ ঘোষণার জবাব দিল আফগানিস্তান

Advertisement

আফগানিস্তানের ইমারাতে ইসলামিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মাওলানা রহমতুল্লাহ নাজিব জানিয়েছেন, পাকিস্তান সম্প্রতি আফগান প্রতিনিধিদলের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি জানিয়েছে। পাকিস্তান চেয়েছে, আফগানিস্তানের দারুল ইফতা বা ইসলামিক আইন অনুযায়ী ফতোয়া জারি করা হোক, যাতে পাকিস্তানে চলমান যুদ্ধে বৈধতা বা অনুমোদন নেই তা ঘোষণা করা হয়।

মাওলানা নাজিব এই তথ্য এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের আলোচকদল আমাদের প্রতিনিধিদলের কাছে তাদের দাবিটি তুলে ধরেছে। তারা চেয়েছে যে, ইমারাতে ইসলামিয়ার সরকার পাকিস্তানে চলমান যুদ্ধে অনুমোদন দেয় না বলে একটি ফতোয়া জারি করুক।”

উপমন্ত্রী আরও বলেছেন, “আমাদের প্রতিনিধিদল পাকিস্তানের এই দাবির জবাবে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, ‘পাকিস্তানে যুদ্ধ বৈধ কি অবৈধ তা নির্ধারণ করা আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এটি আমাদের বিষয় নয়।’”

মাওলানা নাজিবের ভাষ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের ইমারাতে ইসলামিয়ার দারুল ইফতা একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, যা শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ফতোয়া প্রদান করে। “আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানকে আদেশ দিতে পারি না যে, নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে ফতোয়া জারি করুক। এটি সম্পূর্ণ তাদের স্বাধীনতা ও বিচার ক্ষমতার বিষয়,” তিনি বলেন।

পাকিস্তান-আফগান সম্পর্ক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক বহু দশক ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক কারণে জটিল। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ সামরিক অভিযান এবং তহশীলি সংক্রান্ত বিষয়গুলো সবসময়ই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হয়ে থাকে।

পাকিস্তান দীর্ঘকাল ধরে আফগানিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক ফ্রন্ট এবং ইসলামিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে আফগানিস্তানের ভূমিকা পাকিস্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

মাওলানা নাজিব স্পষ্ট করেছেন, যে কোনো আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক রাজনৈতিক চাপের প্রেক্ষাপটে দারুল ইফতা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি বলেন, “আমরা অন্য দেশের দাবিতে ফতোয়া জারি করতে পারি না। আমাদের ফতোয়া শুধু ইসলামের বিধান এবং শরীয়তের আলোকে দেওয়া হয়।”

দারুল ইফতার ভূমিকা

আফগানিস্তানের দারুল ইফতা দীর্ঘদিন ধরে ইসলামিক আইন অনুযায়ী ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নির্দেশিকা প্রদান করছে। এটি এক ধরনের ধর্মীয় আদালতের মতো প্রতিষ্ঠান, যা সরকারের স্বায়ত্তশাসিত হলেও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম।

এই দারুল ইফতা শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়েই ফতোয়া দেয় না, বরং আন্তর্জাতিক ইসলামিক আইন ও ধর্মীয় নৈতিকতার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আফগানিস্তানকে যুদ্ধ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করার আহ্বান করার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করার একটি কৌশল

আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক চাপ কিংবা কোন দেশী দাবি অনুযায়ী তারা ফতোয়া জারি করবে না। এই সিদ্ধান্ত আফগানিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেশের আইন ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতিফলন।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের এই ধরনের দাবি ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে আফগানিস্তান স্পষ্ট করেছে যে, তারা অন্তর্বর্তী নীতির ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে, যা আন্তর্জাতিক চাপে প্রভাবিত হবে না।

মাওলানা নাজিবের বক্তব্য অনুসারে, আফগানিস্তান কোনোরকম রাজনৈতিক বা সামরিক চাপের মুখে ইসলামিক আইন ও দেশের নীতিমালা থেকে বিচ্যুত হবে না

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সামরিক জটিলতার মধ্যে রয়েছে। পাকিস্তানের আহ্বান অনুযায়ী যুদ্ধ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করার দাবি আফগানিস্তান প্রত্যাখ্যান করেছে। মাওলানা নাজিব স্পষ্ট করেছেন যে, দারুল ইফতা স্বাধীনভাবে ফতোয়া জারি করে, কোন রাজনৈতিক চাপের প্রভাব নিচ্ছে না।

এই অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে এই ধরনের দ্বিমুখী চাপে, দুই দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান আরও জটিল হতে পারে।

MAH – 13767 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button