যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ: বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
বিশ্ব বাণিজ্যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে শুল্ক আরোপ ও পাল্টা শুল্কের কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নতুন রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, তবে এর সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
বাণিজ্য যুদ্ধের পটভূমি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই চীন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। চীনা পণ্যের ওপর ১০% এবং কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন, কানাডা ও মেক্সিকোও পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়। চীন মার্কিন পণ্যের ওপর ১০-১৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা
বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে এসব দেশের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন। বাংলাদেশের তুলনামূলক কম শুল্ক সুবিধা ও শ্রম খরচের কারণে তারা এখানে উৎপাদন খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ী দামে পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মো. হাতেম বলেন, “সরকার যদি পলিসি ঠিক করে দেয়, তাহলে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটি কাজে লাগানো যাবে। তাই সময়োপযোগী পলিসি নিতে হবে। এতে দেশের রফতানি আগামী কয়েক বছরে ভালো অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
তবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশের নীতিগত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, “বড় দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের রপ্তানি এবং এফডিআইয়ের জন্য বড় সুবিধা তৈরি করবে। তবে তিনি সতর্ক করেন, যদি বাংলাদেশ আইনগত বাধা দূর করতে না পারে এবং প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার না হয়, তবে এই সুযোগ হারিয়ে যেতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) যদি উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করা যায় এবং এক ছাদের নিচে সমস্ত সেবা নিশ্চিত করা যায়, তবে বাংলাদেশের জন্য এই সুযোগ কাজে লাগানো সহজ হবে।
দীর্ঘমেয়াদী কৌশল
দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলতি মেয়াদেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। কারণ চীন-মার্কিন অনিশ্চয়তা সামনে বাড়তে পারে। আর এতেই সুযোগ তৈরি হবে বাংলাদেশের জন্য। যা লুফে নিতে হবে।”
সতর্কতা ও প্রস্তুতি
তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, শুল্ক সুবিধার সুযোগ কাজে লাগাতে হলে দেশের নীতিগত অবস্থা এবং খাতে সঠিক কৌশল প্রয়োজন। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বা অন্য যেকোনো নীতিগত পরিবর্তন উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে চলমান এই বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য যেমন নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও বয়ে আনছে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হলে সরকার ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং সময়োপযোগী নীতি গ্রহণ অপরিহার্য।