![হাশান তিলকরত্নে কীভাবে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে গ্রুপিং বন্ধ করেছিলেন](https://signalbd.com/wp-content/uploads/2025/02/signal-bd-9.webp)
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে আড়াই বছরের দায়িত্ব পালন শেষে শ্রীলঙ্কান কোচ হাশান তিলকরত্নে সম্প্রতি তার কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের পর তিনি বাংলাদেশ নারী দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল তার শেষ অ্যাসাইনমেন্ট। সফর শেষ করে গতকাল সকালে ঢাকায় ফিরে ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে উড়াল দেবেন তিলকরত্নে।
এই সাক্ষাৎকারে, তিলকরত্নে তার কোচিং ক্যারিয়ারের নানা চ্যালেঞ্জ এবং বিশেষত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ‘গ্রুপিং’ সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন। গ্রুপিং, যা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের মধ্যে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছিল, তিলকরত্নে তাকে দূর করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
গ্রুপিং সমস্যার মুখোমুখি
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল নিয়ে গ্রুপিংয়ের আলোচনাটি বেশ পুরোনো। যদিও কেউ প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কথা বলেননি, তিলকরত্নে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন দলের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপ ছিল। প্রথমেই আমি সেটা লক্ষ্য করেছিলাম। আমি মনে করেছি, এই গ্রুপিংয়ের মধ্যে দল ভালো করতে পারবে না। তাই আমি অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করি এবং গ্রুপিং বন্ধ করি।’’
তিলকরত্নে বলেন, ‘‘কিছু কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছিল, তবে সব কিছু বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির জন্যই। আমি চেষ্টা করেছি, দলের মধ্যে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে, যেখানে সবাই সমানভাবে নিজেকে মূল্যায়িত মনে করবে। আমি প্রত্যেককে সমানভাবে দেখেছি, কখনোই কাউকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে মনে করিনি।’’
গ্রুপিং বন্ধের প্রক্রিয়া
গ্রুপিং সমস্যাকে সমাধান করতে তিলকরত্নে তার নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘‘কোনো পরিস্থিতি সহজ নয়, তবে আপনার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময়, খেলোয়াড়দের মাঝে সমানতা বজায় রাখাটা জরুরি। দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকলে, তা দলের পারফরম্যান্সের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। আমি চেষ্টা করেছি সব কিছুই সবার মঙ্গলার্থে করতে।’’
তিলকরত্নে বলছেন, কোচ হিসেবে খেলোয়াড়দের সম্পর্ক ভালো রাখা এবং তাদের মনোবল বাড়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ‘‘অধিনায়ক নিগার সুলতানা খুব ভালো নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে সে খুব সচেতন ছিল এবং সে নিজেও চেয়েছিল যে গ্রুপিংটা বন্ধ হোক।’’ নিগার সুলতানার ভূমিকা নিয়ে তিলকরত্নে বলেন, ‘‘এটা ছিল আমার জন্য একটি বড় সহায়তা, কারণ আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া গ্রুপিংয়ের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব ছিল না।’’
সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ পড়া
তিলকরত্নে একাধিকবার এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন যেখানে কিছু সিনিয়র ক্রিকেটার দলের বাইরে চলে গেছেন বা নিয়মিত খেলার সুযোগ পাননি। সালমা খাতুন, জাহানারা আলম, রুমানা আহমেদদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা একাধিকবার অনিয়মিত হয়েছেন, আর এ নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা ও অভিযোগ উঠেছিল।
তিলকরত্নে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমার দায়িত্ব ছিল দলকে সামগ্রিকভাবে সঠিক পথে পরিচালনা করা, এবং আমি মনে করেছি, যে কেউ যদি ভাল ফর্মে থাকে এবং প্রমাণ করতে চায়, তাকে সুযোগ দিতে হবে। দলে নতুন তরুণ ক্রিকেটাররা প্রবেশ করছে, তাদেরও খেলানোর সুযোগ দিতে হতো। আমার কাছে পারফরম্যান্স এবং ফিটনেস ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যখন দেখলাম কেউ ভাল পারফর্ম করছে, ফিটনেস ভালো এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত, আমি তাকে দলে সুযোগ দিয়েছি। যেহেতু সবকিছুই বর্তমানে নির্ভর করে, তাই পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
নিগারের ভূমিকা ও দল গঠন
গ্রুপিং দূর করতে নিগার সুলতানার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিলকরত্নে বলেন, ‘‘নিগার খুবই ভালো অধিনায়ক। ওর মধ্যে সমস্যা সঠিকভাবে বোঝার ক্ষমতা ছিল এবং ও নিজেও চেয়েছিল, যে কোনো উপায়ে গ্রুপিংটা বন্ধ করা হোক।’’ তিলকরত্নের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের জন্য একটি সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্মান ও শ্রদ্ধা বজায় রাখা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এছাড়া, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সফল ভবিষ্যতের জন্য তিলকরত্নে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এনেছিলেন, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরো উন্নতি করতে পারে।
সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি
হাশান তিলকরত্নের ক্যারিয়ার ছিল কেবল ফলাফলের জন্য নয়, বরং দলের আভ্যন্তরীণ পরিবেশের উন্নতিতেও। তার প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল উন্নতির পথে অনেকটা এগিয়েছে, বিশেষত যেখানে দলের সদস্যরা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বোঝে এবং সম্মান করে।
তিলকরত্নে এশিয়া কাপ ২০২২-এ বাংলাদেশের সাফল্য এবং দলের বিভিন্ন অর্জনকে কৃতিত্ব দিয়েছেন, তবে গ্রুপিংয়ের বিরুদ্ধে তার কাজ ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। তিনি সফলভাবে একটি স্বচ্ছ, ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছিলেন যেখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মূল্যায়ন ছিল সমান।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হল, তিলকরত্নে নিজের পেশাদারিত্বের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছিলেন, দলের বাইরে গন্ডগোল সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো যত দ্রুত সম্ভব সমাধান না হলে, তা দলের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
উপসংহার
হাশান তিলকরত্নের মতো একজন অভিজ্ঞ কোচের উপস্থিতি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে, দলের মধ্যে একতা এবং উন্নতির লক্ষ্যই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গ্রুপিং বন্ধ করার জন্য তিনি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, তাতে দলের পারফরম্যান্সে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তা অনেকেই সেলিব্রেট করেছে। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।