ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের বিলাসপুরে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে এক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুই ট্রেনের সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত এবং আরও অনেক যাত্রী আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারীদের তৎপরতায় আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। রাজ্য সরকারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অরুণ সাও ঘটনাটিকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিলাসপুর-কাটনি রুটে জয়রামনগর স্টেশনের কাছে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং একটি মালবাহী ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষের জোর এতটাই ছিল যে যাত্রীবাহী ট্রেনের সামনের বগিগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী ট্রেনের পেছনের অংশ মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগার ফলে কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে গেছে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারী দল বগিগুলো কেটে আটকে থাকা যাত্রীদের বের করার চেষ্টা করছে।
ঘটনাস্থল রাজ্যের রাজধানী রায়পুর থেকে প্রায় ১১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দুর্ঘটনার ফলে ট্রেনলাইনের ওপরের বৈদ্যুতিক লাইন ও সিগন্যালিং ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার কারণে ওই রুটে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ কার্যক্রম
দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত উদ্ধারকারীরা এখন পর্যন্ত আহতদের হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সঞ্জয় আগরওয়াল জানিয়েছেন, “উদ্ধারকারী দল ট্রেনের ভেতরে আটকে থাকা যাত্রীদের নিরাপদে বের করার চেষ্টা করছে। কিছু যাত্রী এখনও বগির মধ্যে আটকা রয়েছেন।”
রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা এবং গুরুতর আহতদের ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সামান্য আহত যাত্রীদের জন্য এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
উপ-মুখ্যমন্ত্রী অরুণ সাও জানিয়েছেন, রেলওয়ে ও রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শন করছেন এবং দ্রুত উদ্ধারের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। বিশেষ করে পূর্ণবগি বা লাইনচ্যুত ট্রেনের কারণে বড় ধরনের প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতির ঘটনা ঘটে। ছত্তিশগড় রাজ্যে এর আগেও কয়েকটি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিগন্যালিং সিস্টেমের দুর্বলতা এবং রেল চলাচলে নিরাপত্তার অভাব দুর্ঘটনার মূল কারণ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিয়মিত পরিদর্শন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এসব দুর্ঘটনা কমাতে পারে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
দুর্ঘটনার প্রভাবে বিলাসপুর-কাটনি রুটে ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। এ কারণে একাধিক এক্সপ্রেস ও যাত্রীবাহী ট্রেনের যাত্রা বাতিল বা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আটকে থাকা যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুর্ঘটনার সময় এলাকা ভীষণভাবে বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। বহু যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যেখানে অনেকেই রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রেলপথ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের দুর্ঘটনা রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে। সিগন্যালিং সিস্টেম এবং যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের চলাচলে মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিলে প্রাণহানি কমানো সম্ভব। প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ও নিয়মিত পরিদর্শন নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা কঠিন।
ভারতের ছত্তিশগড়ে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার ও চিকিৎসা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। রাজ্য সরকার এবং রেল কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সংস্কার আনা প্রয়োজন। এছাড়া, দ্রুত উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে এমন মারাত্মক ক্ষতি কমানো সম্ভব।
এম আর এম – ২০৯১,Signalbd.com



