ঢাকায় আসছে নেদারল্যান্ডসের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল
নেদারল্যান্ডসের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল ১০ ফেব্রুয়ারি চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছে। এই প্রতিনিধিদলে ১৮টি ডাচ কোম্পানির প্রতিনিধিসহ নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। সফরটি নেদারল্যান্ডস সার্কুলার টেক্সটাইল প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে আয়োজিত, যা বাংলাদেশে তাদের প্রথম বাণিজ্যিক মিশন।
প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়ে কাজ করবে। ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাস ও নেদারল্যান্ডস এন্টারপ্রাইজ এজেন্সি (আরভিও) এই সফরের আয়োজন করেছে। এক্সপোর্ট পার্টনার, ক্লিন অ্যান্ড ইউনিক, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই) সহযোগী হিসেবে রয়েছে।
টেকসই ফ্যাশনের প্রতি গুরুত্ব
বিএই-এর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সফরকালে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ আয়োজিত ‘ষষ্ঠ সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম’ (এসএএফ) শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনে অংশ নেবে। এই ফোরামটি বাংলাদেশকে বৈশ্বিক তৈরি পোশাক শিল্পে দায়িত্বশীল সোর্সিংয়ে নেতৃস্থানীয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং শিল্পের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে আয়োজন করা হয়েছে।
ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা পোশাক শিল্পে টেকসই উৎপাদন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং ন্যূনতম কার্বন নিঃসরণের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। এটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ও সহযোগিতার ক্ষেত্র
ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কার্সটেন্স এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিনিয়োগ এবং পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে দেশের টেক্সটাইল শিল্প টেকসই উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, নেদারল্যান্ডস বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং ডাচ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত ব্যবধান হ্রাস করতে সার্কুলার টেক্সটাইল প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। এই বাণিজ্য মিশনটি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সহযোগিতার একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
সার্কুলার টেক্সটাইল প্রোগ্রামের গুরুত্ব
সার্কুলার টেক্সটাইল প্রোগ্রাম টেকসই ফ্যাশন ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। নেদারল্যান্ডস এ ধরনের প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে এবং বাংলাদেশে এই মিশনটি সেই প্রচেষ্টারই অংশ। ডাচ প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা, টেক্সটাইল মিল এবং ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এতে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিজিএমইএ সভাপতি জানান, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প ইতিমধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। তবে আমরা আরও টেকসই উৎপাদন পদ্ধতি, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।”
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
যদিও এই সফর ব্যবসায়িক সম্ভাবনা উন্মোচন করবে, তবে উভয় দেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টেকসই প্রযুক্তির খরচ, পরিবেশবান্ধব মান বজায় রাখা, এবং শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নেদারল্যান্ডসের কোম্পানিগুলো এই বিষয়ে প্রযুক্তিগত সমাধান এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের কথা ভাবছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দেশে নতুন প্রযুক্তি আনার পাশাপাশি নতুন বাজারও উন্মুক্ত করবে। ডাচ প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশের উৎপাদন দক্ষতার সমন্বয়ে একটি টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই সফর বাংলাদেশের জন্য শুধু বাণিজ্যিক নয়, বরং কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ডাচ প্রতিনিধিদলের আগমন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের আকর্ষণীয় অবস্থানকে তুলে ধরে। বিশেষ করে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
পরিশেষে বলা যায়, নেদারল্যান্ডসের বাণিজ্যিক মিশনটি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। এটি শুধু পোশাক শিল্পেই নয়, অন্যান্য খাতেও সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। এমন সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে গড়ে তুলবে।