বানিজ্য

ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের চেয়ে বেশি হারে দাম বাড়াচ্ছেন: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মন্তব্য করেছেন যে, ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে মানুষের উপর চাপ বাড়লেও বাস্তবে কিছু ব্যবসায়ী ভ্যাট বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হারে পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। তিনি জানান, এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং আগামী বাজেটে ভ্যাট নীতিতে সংশোধন আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ভ্যাট বৃদ্ধি জনগণের জন্য চাপের কারণ হয়েছে, তবে কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে এটি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়েছে, যা জনগণের ওপর অতিরিক্ত বোঝা তৈরি করেছে।” তিনি আরও জানান, ভ্যাট ছাড়ের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই সরকারের মূল লক্ষ্য।

ভ্যাট বৃদ্ধির পেছনের কারণ

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বহু খাতে দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট ছাড় চলছে, যা সরকারের রাজস্ব আয়ে প্রভাব ফেলছে। এই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে।” তিনি জানান, ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে এবং এতে জনগণের কষ্ট হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ

সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা জানান, “মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসতে আরও দুই-তিন মাস সময় লাগতে পারে। জুন মাস নাগাদ এটি ৬ থেকে ৭ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। আমরা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।”

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

অর্থ উপদেষ্টা জানান, “যেকোনো অর্থনৈতিক সূচক যখন বাড়তে শুরু করে, তখন তা সহজে কমে না। টাকার সরবরাহ বেশি থাকা, সরবরাহ শৃঙ্খলার দুর্বলতা, এবং অর্থনৈতিক অনিয়মের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ব্যাংক খাতে অনিয়ম এবং অর্থ পাচারের কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।”

ব্যাংক খাতের অবস্থা

অর্থ উপদেষ্টা জানান, “মাত্র ১২টি ব্যাংক কার্যকরভাবে কাজ করছে, বাকিগুলো বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। এই সরকার সেই জটিল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।” তিনি বলেন, “পরিচালকেরা নিজেদের অর্থ নিয়ে পালিয়েছে এমন ঘটনা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। আমাদের দেশে এমনকি আমানতকারীদের অর্থও নিরাপদ নয়।”

সরকারের করণীয় এবং পরিকল্পনা

অর্থ উপদেষ্টা জানান, “অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ সংস্থানের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।” তিনি বলেন, “চাল, ডাল, সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার আমদানির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করবে। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক বাতি নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এলএনজির আমদানি নির্বিঘ্ন রাখা হবে।”

তিনি বলেন, “আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিত না করলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। ব্যাংকিং খাতে সংস্কার, অর্থ পাচার রোধ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার।

উপসংহার

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ স্পষ্টভাবে বলেছেন, “ভ্যাট বৃদ্ধি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। সরকার অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে এবং আগামী বাজেটে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button