বিশ্ব

চিপ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে চীন: হোয়াইট হাউস

Advertisement

বিশ্বব্যাপী গাড়ি উৎপাদন ও প্রযুক্তি শিল্পে ব্যবহৃত অটোমোটিভ কম্পিউটার চিপের ওপর আরোপিত রফতানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এতে দীর্ঘদিন ধরে চলা চিপসংকট প্রশমিত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

চুক্তির মূল বিষয়: ‘লিগ্যাসি চিপ’ রফতানিতে ছাড়

ওয়াশিংটনে প্রকাশিত হোয়াইট হাউসের এক ফ্যাক্টশিটে বলা হয়েছে, চীনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নেক্সপেরিয়ার উৎপাদিত গুরুত্বপূর্ণ ‘লিগ্যাসি চিপ’ যাতে বৈশ্বিক বাজারে অবাধে প্রবাহিত হতে পারে, সে বিষয়ে চীন ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে সম্মত হয়েছে। এই চিপগুলো গাড়ি, শিল্পযন্ত্র ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে চিপ সরবরাহের চাপ অনেকটা কমাবে এবং বিভিন্ন দেশের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করবে।

যুক্তরাষ্ট্র–চীন বৈঠকের ফলাফল: উত্তেজনা প্রশমনের ইঙ্গিত

দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে চুক্তির এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে দুই দেশই জানায়, “গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে।”

মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট সিএনএনকে বলেন, “আমরা চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না। তারা নিজেদেরকে একজন বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে প্রমাণ করেছে।”
এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনের পথে রয়েছে।

বাণিজ্যযুদ্ধ

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও শুল্ক আরোপ করে, যার ফলে বৈশ্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়।

বিশেষ করে চিপ, বিরল ধাতু ও ফেন্টানিল উৎপাদনের উপকরণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়। তবে সাম্প্রতিক এই সমঝোতা দুই দেশের মধ্যে নতুন সহযোগিতার দ্বার খুলে দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে স্বস্তি

চিপ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ফলে ইউরোপ ও এশিয়ার গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।
গত মাসেই ভলভো, ভক্সওয়াগন এবং জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার জানিয়েছিল, চিপ সংকটের কারণে তাদের কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রাখার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

এখন চীনের সিদ্ধান্তের ফলে এসব কোম্পানি নতুন করে উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং আগামী বছরে অটোমোটিভ খাত পুনরুদ্ধারের পথে অগ্রসর হবে।

বিরল ধাতু ও সয়াবিন রফতানিতেও সমঝোতা

চুক্তির অংশ হিসেবে চীন এক বছরের জন্য বিরল ধাতু রফতানিতে আরোপিত নিয়ন্ত্রণ স্থগিত রাখবে। এসব ধাতু গাড়ি, বিমান ও প্রতিরক্ষা খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রফতানিতেও নতুন সমঝোতা হয়েছে। চীন জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ দুই মাসে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১২ মিলিয়ন টন সয়াবিন আমদানি করবে, এবং পরবর্তী তিন বছর প্রতি বছর ২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন করে কিনবে।

এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের জন্য ইতিবাচক খবর, যারা দীর্ঘদিন ধরে চীনা বাজার হারিয়ে ক্ষতির মুখে ছিলেন।

ফেন্টানিল সংক্রান্ত ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত

চুক্তিতে ফেন্টানিল নামের এক প্রভাবশালী সিন্থেটিক ড্রাগের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণেও সহযোগিতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, এই ড্রাগ তৈরির রাসায়নিক উপাদানগুলোর বেশিরভাগই চীন থেকে আসে।

চীন এবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ফেন্টানিল উৎপাদনের উপকরণ নিয়ন্ত্রণে তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ওপিওয়েড–সংক্রান্ত মৃত্যুহার কমাতে এই পদক্ষেপ সহায়ক হতে পারে।

বৈশ্বিক ভারসাম্যে নতুন ধারা

অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর খাতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পারস্পরিক নির্ভরতা ভবিষ্যতে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে।

তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, রাজনৈতিক উত্তেজনা পুনরায় না বাড়লে এই অগ্রগতি স্থায়ী হবে। অন্যথায়, বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজার আবারও সংকটে পড়তে পারে।

নতুন সহযোগিতার সূচনা না সাময়িক শান্তি?

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন চুক্তি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আশার বার্তা নিয়ে এসেছে। চিপ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা টেকসই হবে, তা নির্ভর করছে আগামী মাসগুলোতে উভয় দেশের বাস্তব পদক্ষেপের ওপর।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে — এই সমঝোতা কি সত্যিই নতুন সহযোগিতার সূচনা, নাকি সাময়িক শান্তির এক পর্ব?

এম আর এম – ২০৬১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button