আঞ্চলিক

পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা বছরে ১২০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে

Advertisement

সাবেক সেনা কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিরা পার্বত্য এলাকায় সেনা ক্যাম্প বাড়ানো এবং স্থায়ী ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তারা এ অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব মোকাবিলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

ঘটনা

রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘অশান্ত পাহাড় সার্বভৌমত্বের হুমকি, জাতীয় নিরাপত্তায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। এতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে উপস্থিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন বলেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে হাতছাড়া না হয়, তার জন্য এবং পার্বত্য এলাকার জনগণের নিরাপত্তার জন্য পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প বজায় রাখা অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে, যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।

সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজি

লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি বছরে ১০০০–১২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জেএসএস এবং ইউপিডিএফের বিভিন্ন শাখা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আদায় করে। এ চাঁদাবাজি স্থানীয় জনজীবন, অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।

তিনি বলেন, পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে হলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম দমন করা এবং সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও, পার্বত্য চুক্তি রিভিউ করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

সেনা ক্যাম্প ও ক্যান্টনমেন্টের দাবি

সিএইচটি সম্প্রীতি জোটের আহ্বায়ক থোয়াই চিং মং শাক বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য কেবল ক্যাম্প নয়, স্থায়ী ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করা প্রয়োজন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের ১৯০০ সালের পাহাড় আইন এবং ১৯৮৯ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিষদ আইন বাতিলের আহ্বান জানান।

গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, পাহাড়ে স্থায়ী ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে সীমান্ত সুরক্ষার জন্য ক্যান্টনমেন্ট থাকা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রভাব

সাবেক মেজর দেলোয়ার হোসেন খান ও অন্যান্য বক্তারা জানান, পার্বত্য এলাকায় সীমান্তের ওপারে ক্রস-বর্ডার হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার চালানো হচ্ছে। এই কারণে সেনা ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। সেমিনারে বলা হয়, পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর অবদান অপরিসীম, তবে হিল ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা অপ্রতুল।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, পাহাড়ে কর্মরত সেনাসদস্যরা ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাঁদের জন্য হিল ভাতা বাড়ানো, আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় বাঙালি এবং অবাঙালিদের মধ্যে বৈষম্য বিদ্যমান। অধিকার ও সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে অনান্য সম্প্রদায়কে সুবিধা দেওয়া হলেও বাঙালি অধিবাসীদের পেছনে রাখা হয়েছে। সেমিনারে এই বিষয়েও জোর দেওয়া হয় যে, পাহাড়ে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এছাড়া পাহাড়ে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির কারণে স্থানীয় ব্যবসা, অর্থনীতি ও শিক্ষা ক্ষেত্র মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ১২০–১৫০ জন অপহরণ ও গুমের ঘটনা সনাক্ত করা গেছে।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তারা মনে করছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ঝুঁকির মুখে পড়বে। বিদেশি প্রভাব, সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম ও রাজনৈতিক অবহেলা পরিস্থিতি আরও জটিল করছে।

বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব দিয়েছেন—পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি, স্থায়ী ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন, আধুনিক চিকিৎসা সেবা ও হিল ভাতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপত্তা ও মনোবল বৃদ্ধি করা সম্ভব।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি ও ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনের দাবির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং স্থানীয় জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে এ অঞ্চলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

এম আর এম – ২০৫৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button