ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি জোর দিয়েছেন, ইরানের লক্ষ্য কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা নয়। পাশাপাশি তিনি দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক স্থাপনা পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্টের ঘোষণার বিস্তারিত
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান স্থানীয় সময় রোববার তেহরানে পারমাণবিক শক্তি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন,
“ভবন ও কারখানা ধ্বংস করে আমাদের অগ্রগতি থামানো যাবে না। আমরা পুনর্গঠন করব আরও দৃঢ়ভাবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, চলতি বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় কিছু পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা ইরানের অগ্রগতি থামাতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসা গবেষণার মতো শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
আইএইএর সঙ্গে সম্পর্ক ও পূর্বপরিস্থিতি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা এখন আর তেহরানের কাছে প্রাসঙ্গিক নয়। গত মাসে কায়রোতে ইরান ও আইএইএর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, যা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় পরিদর্শন ও নজরদারির একটি কাঠামো নির্ধারণ করেছিল।
কিন্তু জুনে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলার পর তেহরান সেই সহযোগিতা স্থগিত করে দেয়। আরাগচি বলেছেন, “পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর আমরা নতুন পথে হাঁটছি।”
ইরান আইএইএর বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে। তাদের মতে, এনপিটি চুক্তির অধীনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা জানায়নি, যা সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
পরমাণু কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। তবে তেহরান বারবার জানিয়েছে, তাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
ইরানের সংসদে কিছু সদস্য এনপিটি চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়ার প্রস্তাব তুললেও প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করেছেন, তারা এখনই চুক্তি ভঙ্গের চিন্তা করছেন না এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বজায় রাখবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা শুধুমাত্র ইরানকেই নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, এটি সংঘাতের নতুন অধ্যায়, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
পুনর্নির্মাণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ঘোষণা করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরও শক্তিশালীভাবে পুনর্নির্মাণ করা হবে। তিনি জোর দিয়েছেন, দেশের পারমাণবিক অগ্রগতি কোনো خارجی হামলায় থেমে যাবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইরানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের একটি উদ্যোগ। একই সঙ্গে, পশ্চিমা শক্তিগুলোকে জানানোর চেষ্টা যে ইরান তার কর্মসূচি থেকে সরে আসবে না, তবে তা পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য নয়।
বিশ্লেষণ ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
বিশ্ব রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলো—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত ও পুনর্নির্মাণের ঘোষণার ফলে ইরানের কূটনৈতিক শক্তি কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান পরমাণু ইস্যুতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না, তবে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো পুনর্নির্মাণ করা হবে। আন্তর্জাতিক চাপ এবং নতুন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তেহরান তার পথ অব্যাহত রাখছে, যা মধ্যপ্রাচ্য ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
এম আর এম – ২০৫৭,Signalbd.com



