আঞ্চলিক

জকিগঞ্জ সীমান্তে স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে পালালো বিএসএফ

Advertisement

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এই অনুপ্রবেশের সময় বিএসএফ সদস্যরা কৃষিজমি এবং কিছু স্থাপনা ভাঙচুর করেছেন। পরে স্থানীয়দের প্রতিবাদ এবং বিজিবির তৎপরতায় বিএসএফ সদস্যরা সীমান্ত পেরিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

এই ঘটনার ফলে সীমান্তে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি ইতিমধ্যেই শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সতর্কবার্তা দিয়েছে।

রসুলপুর সীমান্তে বিএসএফের অনুপ্রবেশ

রোববার, ২ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী ৯ নং মানিকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর সীমান্তে এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভারতের বিএসএফ সদস্যরা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের কৃষিজমিতে প্রবেশ করে। তারা স্থানীয়দের সবজি চাষের জমি, বাঁশ ও ভেড়া দিয়ে তৈরি ছোটখাটো কুটির ও অন্যান্য স্থাপনা ভেঙে দিয়েছে।

রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসেম আলী বলেন, “আমরা যখন তাদের প্রবেশের খবর পাই, তখন গ্রামের মানুষ ছুটে এসে তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের দৃঢ় প্রতিরোধের কারণে বিএসএফ সদস্যরা সীমান্ত পেরিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আমরা এখন সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।”

বিজিবি ও স্থানীয়দের দ্রুত পদক্ষেপ

জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জুবায়ের আনোয়ার জানিয়েছেন, “বিএসএফের এই অনুপ্রবেশ আমাদের নজরে এসেছে এবং আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে, সেই বিষয়ে বিএসএফকে কঠোর সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পতাকা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের সীমান্ত রক্ষী সদস্যরা ইতিমধ্যেই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।”

বিজিবি সূত্র জানায়, সীমান্তে এই ধরনের অনুপ্রবেশ বিরল হলেও, পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে তারা সবসময় সতর্ক থাকেন। জকিগঞ্জ সীমান্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সংবেদনশীল এলাকায় পড়ে এবং এখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

সীমান্ত সংক্রান্ত অতীত ঘটনা

জকিগঞ্জ উপজেলার রসুলপুর সীমান্ত এলাকায় পূর্বেও অনুপ্রবেশের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। অতীতে বিএসএফের সদস্যরা সীমান্ত অতিক্রম করে স্থানীয় চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত করত, কিন্তু বিজিবির দ্রুত পদক্ষেপের কারণে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে যাওয়া গেছে।

২০১৯ সালে এই সীমান্তে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হয়েছিল। সেই সময়ও স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানিয়ে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছিলেন।

সীমান্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের ঘটনা খুবই সংবেদনশীল। স্থানীয় জনগণ, বিজিবি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। তবে সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত মনিটরিং ও সতর্কতা অপরিহার্য।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

রসুলপুর গ্রামে কৃষক ও স্থানীয়রা জানান, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অনুপ্রবেশ করলে তাদের সবজি চাষের ক্ষেতের ক্ষতি হয়। এছাড়া স্থানীয় বাঁশের কুটির ও ছোটখাটো স্থাপনা ভেঙে গেলে দৈনন্দিন জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

হাসেম আলী আরও বলেন, “আমরা সীমান্তে সবসময় নজরদারি করি। আমাদের প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ এখন আরও সতর্ক। আমরা চাই, সীমান্তে যাতে আবার অনুপ্রবেশ না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসন ও বিজিবি আরও সক্রিয় হোক।”

বিজিবির সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বিজিবি জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ জুবায়ের আনোয়ার জানিয়েছেন, বিজিবি সীমান্ত রক্ষার জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে রয়েছে:

  • সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো
  • রাউন্ড দ্যা ক্লক пат্রোলিং করা
  • স্থানীয় জনগণকে সতর্ক রাখা
  • বিএসএফের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই সীমান্তে সকল কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হোক। তবে কেউ বাংলাদেশি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের গুরুত্ব

জকিগঞ্জের সীমান্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল চাষাবাদ ও জীবনধারার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং সীমান্ত নিরাপত্তা, পাণবাহী নদী কুশিয়ারা, এবং বাণিজ্যিক ও সামাজিক যোগাযোগের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সীমান্ত বিশেষজ্ঞরা বলেন, “এ ধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিয়মিত পতাকা বৈঠক, সীমান্ত নজরদারি এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা অপরিহার্য।”

স্থানীয় প্রশাসনের মন্তব্য

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানিয়েছেন, “বিএসএফের এই অনুপ্রবেশ আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ইতিমধ্যেই বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করেছি। গ্রামে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি মনিটর করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ যেন নিরাপদ থাকে, সেই বিষয়ে আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

বিজিবি এবং স্থানীয় প্রশাসন মিলে সীমান্ত এলাকায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এতে থাকবে:

  • সীমান্তে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন
  • ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ
  • স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতন করা
  • অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া

সীমান্ত নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “স্থানীয় জনগণ এবং বিজিবির সমন্বয় এই ধরনের ঘটনার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর। এছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে সীমান্ত নজরদারি আরও শক্তিশালী করা সম্ভব।”

জকিগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের অনুপ্রবেশ, স্থানীয়দের প্রতিবাদ এবং বিজিবির দ্রুত পদক্ষেপের ফলে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো গেছে। তবে এটি আবারও প্রমাণ করে, সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা অপরিহার্য।

বিজিবি এবং স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই শক্ত অবস্থান নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্থানীয়রা এখন আরও সতর্ক এবং সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে প্রস্তুত।

MAH – 13601 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button