কার্তিক মাসের মধ্যভাগে শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যার আগে ঢাকার আকাশ মেঘে ঢেকে আসে ঘোর অন্ধকার। পরে কয়েক ঘণ্টা ধরে ধীরস্থির বৃষ্টি শুরু হয়, যা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এতে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়।
আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
জলাবদ্ধতার বিস্তৃতি
বৃষ্টির পর রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর-১৩, হাতিরঝিল, আগারগাঁও, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর, মেরুল, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, ইসিবি, কালশীসহ অনেক সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে হাতিরঝিল হয়ে বাড্ডা এলাকায় আসা বেসরকারি চাকরিজীবী এরশাদ আলী জানান, অফিস শেষ করে রাস্তায় বের হওয়ার সময় বিভিন্ন জায়গায় পানির কারণে যাত্রা ব্যাহত হয়েছে।
নাগরিকদের দুর্ভোগ
জলাবদ্ধতার কারণে সাধারণ মানুষকে প্যান্ট গুটিয়ে ও জুতা হাতে নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বারিধারা এলাকার বাসিন্দা সাদিকুল ইসলাম বলেন, “অভিজাত এলাকায়ও সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অফিসের সময়কার যানজট আরও ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।”
শিশু, বৃদ্ধ ও দূরত্বপ্রেমী যাত্রীরা বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন। বিশেষ করে গাড়ি ও অটোভ্যানে সড়কে ধীরগতি জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ট্রাফিক পরিস্থিতি ও যানজট
বৃষ্টির ফলে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট দেখা দেয়। বিশেষ করে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, নাজিমুদ্দিন রোড ও হাতিরঝিলের এলাকায় যানবাহনের গতি অনেকটাই কমে আসে। ট্রাফিক পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, “বৃষ্টির কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সময় ও শ্রম লাগছে। সাধারণ মানুষকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
আবহাওয়া পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। এই সময়ে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাতাস দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে। রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।
ঢাকায় বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার সমস্যা নতুন নয়। বর্ষার সময় সাধারণত সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবে কার্তিকের এই হঠাৎ বৃষ্টিতে অনেক এলাকা দ্রুত পানি জমে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর উন্নয়ন ও নিকাশী ব্যবস্থার ঘাটতি, অপরিকল্পিত নির্মাণ এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে জলাবদ্ধতার মাত্রা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
নগর পরিকল্পনা ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, “ঢাকার জলাবদ্ধতা প্রতিনিয়ত পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এটি কেবল বৃষ্টির কারণে নয়, বরং শহরের নিকাশী ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে।”
একজন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, “যদি বৃষ্টিপাতের পর দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে শুধু যানজট নয়, স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়তে পারে। নগর কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।”
কার্তিকের এই বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার প্রমাণ হয়ে উঠেছে। রাজধানীবাসীর দৈনন্দিন জীবন ও যানবাহনের চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হওয়া এ ধরনের ঘটনা আগামীতে কমাতে পরিকল্পিত নগর উন্নয়ন ও কার্যকর নিকাশী ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।
এম আর এম – ২০৪২,Signalbd.com



